Friday, December 9

।। শীত সংখ্যা ।। ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ।।

হাতের ডান দিকের সূচীপত্রে কবির নামের উপর ক্লিক করলে সেই কবির লেখাড়া যাবে ........

বেশ্যাবৃত্তি ও পর্ণোগ্রাফি পরস্পরের পরিপূরক

চিন্ময় মণ্ডল
আদি প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে নব্য প্রস্তর যুগের হাত ধরে বর্তমানে মানবসভ্যতা ন্যানো টেকনোলজিতে উপনীত হলেও উন্নত ভোগবাদী মানসিকতার বিকাশ ক্রমবর্ধমান যা সুন্দর সুস্থ সমাজব্যবস্থা গড়ার অন্তরায়।কেননা বর্তমান সভ্যতার প্রেক্ষাপটে যৌনব্যবসা বা গণিকাবৃত্তি ও পর্ণ সাইট এর মতো ঘৃণ্যতম সামাজিক ব্যাধিকে টিকিয়ে রাখার সুপার পাওয়ার হল ভোগবাদী মানসিকতা। যেহেতু ভোগবাদী চিন্তার অন্যতম হল যেনতেন প্রকারে জীবন কে উপভোগ করা।এই রাজনৈতিক নেতা-মস্তান, পুলিশ - প্রশাসন, হোটেল রিসর্টের মালিকদের সসম্মিলিত প্রয়াসেই আজকের এই যৌনব্যবসা ও পর্ণোগ্রাফির বাড়বাড়ন্ত, যা রাস্ট্র সযত্নে লালনপালন করে যাচ্ছে,কেননা যখন দেখছি উন্নত দেশ গুলো পর্ণোগ্রাফি বা পর্ণোসাইট বন্ধের তাগিদ অনুভব করছে তখন আমাদের রাস্ট্র নায়করা "নাগরিকের ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ" কোরতে নারাজ বনাম নৈতিকতার ভোট বাক্স স্ফীতের তল্পিবাহক এর ভুমিকায় মহানুভবতার প্রতীক,সত্যি নাগরীক দের শয়ন কক্ষে উকি মারা কি রাষ্ট্রের কাজ

Tuesday, December 6

আলবিদা “আম্মা”

১৯৪৮-২০১৬
এক বর্ণময় জীবনের পরিসমাপ্তি ...........
রূপালী জগৎ থেকে রাজনীতির সফর .............. পিছু ছাড়েনি বিতর্ক , সমস্ত বিতর্ককে পেছনে ফেলে এক লড়াইয়েরই অন্য নাম হয়ে উঠেছিলেন জয়ললিতা। ....... যেখানেই থাকুন , ভালো থাকুন আপনি।।

Sunday, December 4

এঁরা সমাজের কারা

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস

আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস । প্রথমেই আমার সহযোদ্ধা প্রতিবন্ধী ভাই ও বোনেদের বয়স অনুযায়ী শ্রদ্ধা জানায় ।
“ জীবনের শারীরীক অক্ষমতা একটা খারাপ মনের মধ্যে বসবাস করে । সমাজের মর্য্যদার মধ্যে বসবাস করে । সামাজিকতার মধ্যে বসবাস করে । এমন কি ধর্মের ধর্মমতের মধ্যেও বসবাস করে । তাতে মানসিক অমর্য্যদা ঘটে । সামাজীক অমর্য্যদা ঘটে । তাই তোমার সমাজ , ধর্ম ও নৈতিকতার কাছে দায়ব্ধতা নাই । তুমি যেহেতু করুণার পাত্র । নৈতিকতার পাত্র নও। তাই তোমার পথটা আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে উপলব্ধি করতে হবে । ”

“যে , যে পথ দিয়ে চলে চলে , তার গৃহে ফেরার পথ হয় সেইটি । যেহেতু তুমি প্রতিবন্ধী । তাই তোমার চলার পথ মস্তিষ্কের মধ্যে খোঁজ । মনোযোগ দাও তাতে তৈরী হবে তোমার বাঁচার পথ ।”

আমাদের দাবি ও প্রতিবাদঃ-
°°°°°°°°°′°°°°°°°°°°°°°°°°
@যে সব প্রতিবন্ধী কাজ করার মত সক্ষম তাদের কাজ দিতে হবে।

@যারা কাজ করার মত অক্ষম তাদের বাজার অনুযাযী পেনশন দিতে হবে ।

@ প্রত্যেক অফিস , স্কুল , কলেজ এবং বেসরকারি সংস্থায় প্রতিবন্ধী পরিবেশ দিতে হবে ।

@ যে কোন উৎসবে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ পরিস্থিতি তৈরী করতে হবে । যাতে তারা উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারে ।

@ সারা ভারতে প্রত্যেক বাস্ট্যাণ্ডে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা বাতরুমের ব্যবস্থা করতে হবে ।

@ প্রত্যেক জেলা ভিত্তিক প্রতিবন্ধী স্কুল ও কলেজ তৈরী করতে হবে ।

@ সারা ভারতের প্রতিবন্ধীদের সরকারী আওতায় নিয়ে আসতে হবে ।

@সরকারী ভাবে প্রতিবন্ধী দের হুইলচেয়ার ও নানা প্রতিবন্ধী সরঞ্জাম দিতে হবে প্রতি বছর ।

@রেল ও বাসে প্রতিবন্ধী কার্ড ছাড়াই বিনাপয়সায় চলাচলের অনুমতি দিতে হবে । সেই ক্ষেত্রে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে ।

@যে সব প্রতিবন্ধী চিকিৎসা পেলে স্বাভাবিক জীবন পাবে তাদের চিকিৎসা ভার সরকারকে নিতে হবে ।

@প্রতিবন্ধীদের পেনশন প্রতি মাসেরটা প্রতিমাসে দিতে হবে ।

@যারা একদম অক্ষম প্রতিবন্ধী তাদের সরকারি হোমে রেখে বাকি জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে ।

@ প্রতিবন্ধী শব্দ তুলে দিয়ে লিখতে হবে “ অন্য উপায়ে সক্ষম” ।

শীতের আবির্ভাব

মোঃইমাম হোসেন দিদার

লাগছে গা য়ে শীতের আভা
সন্ধা হবার পারে,
আকাশ বাতাস পাহাড় ফুঁড়ে
শীতযে পড়ছে গা য়ে।

হালকা কাপড়-জামা পরে
যাবেনা বেরনো বাইরে,
মায়ের কথা,বেরোতে হলে
শীতের কাপড় চাইরে।

সকালবেলা শিশির পড়া
খুশিতে রাজ্য ভরা,
আবাল বৃদ্ধ সবাই দেখ
শীতের কাপড় পরা।

শীতের পিঠা মস্ত মজায়
চলে আসে তখন,
কী যে মজা খেতে এটা
যেন পুরো মাখন।

শীতের আভাস পড়ছে দেখ
শহর কিংবা গঞ্জে,
শীতের গীতে ভরবে প্রাণ আর
ভরবে সবার মন যে।

সুরে সুরে বেরিয়ে এল

নাড়ু  গসিপ্

~~~~~~~
সত্যিই পূজোর সময় সেইসব হরেক কিসিমের নাড়ু, খইভূজো আর হলুদরঙা মুড়ির সঙ্গে ডুমুরের ফলভাজা - সেএক স্মৃতিমেদুরতা !  কবেকার খাওয়া সহপাঠীদের বাড়ির নারকেল নাড়ু, তিলে নাড়ু এমনকি গুড়কলাই নাড়ুরও সেই সুস্বাদের কথা মনে পড়লে এখনও জিভে জল আসে ! শারদুৎসবের মাসদুয়েক আগেই আমরা ঠিক করে নিতাম সেবার কোন গ্রামে যাব।

দেখেছি রায়বাড়ির বয়ঃবিধবাকর্ত্রী ছোঁয়াছুঁয়ি এড়িয়ে দূর্গা-মণ্ডপে আসতেন দুধসাদা শাড়িতে মোহময়ী হয়ে, তিনি কি-যেন একটা শুরুয়াৎ করে দিয়েই গা-কাপড় বাঁচিয়ে আবার দরদালানে উঠে যেতেন। তারপরই ঢাক বাজত, বাড়ির অন্যান্য সদস্যা'রা শাঁখ বাজাত, উলুধ্বনি দিত ; সেইসঙ্গে চলত নাড়ু-উৎক্ষেপন।

আর তা নিয়ে ছেলে-ছোকরাদের হুড়োহুড়ি পড়ে যেত, সেগুলি কুড়িয়েই সটান মুখে পুরে দিত - পাছে অন্য কেউ কেড়ে নেয়। একবার একছেলে মুখে তুলতেই কেমন যেন বিস্বাদ লাগে, সঙ্গেসঙ্গে উগলে ফেলে পুকুরঘাটে কয়েকবার কুলকুচি করে নেয়, ভেবেছিল মাটি-ফাটি হবে বোধহয় ; ঠিক তখনই ব্যাপারটা লক্ষ্য করে অন্যজন বলে --
" আরে তুই কী খেয়েছিস ? ...এই এই সবাই শোন, ও নাড়ু ভেবে কুকুরের ... "
আর দেখে কে, ' হক হক ' করে  সে-কী বমি ...

মাফ করবেন, আসলে সারমেয়র শুকনো বিষ্ঠা আর ঘরে বানানো চিনির ভিয়েনের নারকেল নাড়ু পার্থক্যটা ছিল সূক্ষ্ম। আর এখন তো প্রায় সবই বাজারী।
                                 -- জাহাঙ্গীর  হোসাইন

লিভ্টুগেদারে

স্নিগ্ধসত্তা (সুলেখা সরকার)

পাশাপাশি দুটো পথ লিভ্টুগেদারে
কয়েক বছর
  সারি শাল সঞ্চিত শুকনো পাতা ঠেলে
  মাটির সন্ধান
  মিলিটারি ক্যাম্প ছাড়িয়ে তুই আমি
  চারটি পা
  মডেল ট্যাঙ্ক হেরিটেজ হবে ।
  উদবিড়ালের স্কাল্ প্ চার,
  টাইল্ স  কেটে মিলিটারিদের
  হোয়াইট্ - ব্রাউন্ খেলনা হাতি, 
  মাঠ পেরিয়ে  অন্য পথ
  যাবি ?
  অচেনা চেনা হবে ? 
লাল - কালো চুল হেলমেট্ -এ বাঁধা
  গাড়ির স্পিড্ রাস্তায়
  ভিডিওর ভিড় ফূডসেন্টারে
পত্রলেখা চোখের কোণটায়
হাত ছেড়ে যায় লাইফ স্টাইল
  একমিনিট ,  কন্ ডোলেন্স্।

গালে গড়ানো নীল ফেনা সমুদ্র হয়।।

বন ভোজন

ডাঃ অরুণ কুমার দাস

বনভোজন শেষ করে
মৃত্যুদন্ড নিয়ে বাড়িযাচ্ছে রাত
আমরা যারা অগ্নিস্বাক্ষী হতে এসেছি

সম্ভাবনাময় আগুনের চারপাশে 
ভিক্ষাজীবী - - -

নারীপুরুষ  নির্বিশেষ
জঠরাগ্নী নিভেগেলে জলঢালি
আরো আরো ট্রেন ঢুকেপড়ে
                           লোভ - কাম - ক্রোধ - - -

সহযাত্রী লাস্য ছড়ায়

রুমাল উড়িয়ে আমলকীবনে নতুন সকাল
আবার একদল ভ্রমনার্থী
বনভোজনের আয়োজন করে কাঠ সাজায়

কেউ পোড়ে
কেউ আগুন পোহায়

এ বং

রোদের লাস্য দেখতে দেখতে
এনাটমি বিশেষজ্ঞ দিন
নিত্যসম্ভব ঝর্নার পাশে দু- রকমের ঈশ্বর
সম্ভবত আমার আগের কোন জন্মের আত্মা
গাবাঁচিয়ে চলে যায়

শনিবার রাত গণিতপাঠের আনন্দ বিকোয়
মর্ত্যধামে

যেহেতু আমার মাপের আর একটা আমি
এখনো তেমন নিত্যযাত্রী নই
দৈনন্দিন কুড়িয়ে রাখি জানালার রোদ্দুরে

দূরদর্শীরা অন্তরীক্ষের নাদ শুনছে

আছে আর নেই এর যে কোনদিকে তর্ক
স্বরুপে ফিরি, ফিরতেই হয় -
গাবাঁচানোর দিকে মন
মন ভূ-গোল ব্যকরণ মিলিয়ে বিয়োগান্তক

কন্ঠস্বর তেমন জনান্তিক যেমন - দেশলাই
জ্বালানোর আগের সিগার ।

সুদীপ লোহারে’র অনুকবিতা

একালের একলব্য"
                 

ভালোবাসাকে আমি খেয়ালি বাতাস ব'লে ডাকি ,
আর তুমি ঠিক দ্রোণাচার্য ।
আমি তো অর্জুন নই -
আমি এক অনার্য যোদ্ধা ।
তোমার ঠোঁটের সাইনাইডে আমি নীলকন্ঠ হতে পারি ,
কিন্তু এই বৃদ্ধাঙ্গুলি---একান্তই আমার।

ইতিহাস হয় সময়

দেবব্রত সরকার

শ্রদ্ধা করতে মন চায় মন চায় শ্রদ্ধা করতেই 
আপনার জন্য গাল পেতে আহ্বান করি আর্শীবাদ
আপনার জন্য কলম তুলেদিই ইসাকপনের টেক্কা 
তাসের ঘর কে সাজিয়ে তুলে জীবন্ত সংসারঘর
সময় এখন ইতিহাস ইতিহাস এখন পঞ্চাশ গড় আয়ু ভারতীয়র মতই 
তারপর! তারপর কোন এক নতুন যুদ্ধ সময় বাঁচানোর
প্রেম করে সহবাস করা  যার সাথে সেও কতটা পথ হাঁটে দেখবে সময় 
অপেক্ষার দূরত্ব এঁকে রোজনামচায় ঘর সাজিয়েছে আমার প্রেমিকা
তাকে বেশ লাগছে আমার সুখের কান্নায় এটা মেয়েরাই পারে ! পারে মেয়েরাই !
যখন কলম রেখে মানুষ হই তখন ভাবি মেয়েরা আসল হীরের মর্যদায় বোঝেনা 
কারণ ওই হীরেটা যমকালো কয়লার ভেতর দীর্ঘ সময় ধরে থেকে উজ্জ্বলতা ঢেকে রাখে
ঢেকে রাখা সময়, কখন গড় আয়ুতে হেঁটে যায় চশমার কাঁচ মুছে ভুল স্বীকার করে খমা চায় আদুরে হৃদয়া 
আর চিত্রগুপ্ত পৃষ্ঠা উল্টোয় যমরাজের করা নির্দেশে শাস্তির প্রোহর গুনে ইতিহাস হয় সময়
যে সময়ের গল্প শুনে ইতিহাস হয়না ইতিহাস গেঁথে রাখে তাকে শ্রদ্ধা করে গাল পেতে আহ্বান করি আর্শীবাদের !
                                   ---------

দোষ

সায়ন ব্যানার্জী

তোমার ব্যালকোনির পরন্ত রোদে
তুমি স্নান করছো দাড়িয়ে, রোজের মত
কোন এক বৃষ্টির দিনের কথা ভেবে,
তোমার মন উদাসীন
আমি সবই বুঝি, সেই বৃষ্টির কাছে
আমারও অনেক কৈফিয়ত চাওয়ার বাকি
তবু যখন তোমার চোখের একফোটা অশ্রুবিন্দু
দিনের শেষ রোদের ছোঁয়ায়, একচিলতে স্বর্ণকনায় পরিণত হয়
তবু যখন তোমার নরম দুই হাত, ব্যালকোনির লোহার রেলিং
আঁকরে ধরে শক্ত করে
তখন ভাবি, দোষ কার ছিল,
বৃষ্টির? বয়সের? না চাহিদার?......।।

রাশের মাজীর গুচ্ছকবিতা

গোপন কথা

শূন্য দেওয়াল কথা বলে, একাকী
গভীর রাত্রে
কার সহে, জানে না কেহ
কেবল ঘড়ি
টিকটিক করে আপন মনে চলতে চলতে
শুনে সে কথা

কল্পনা

-------------------
চোখের পলক যায়না ফেলা
তোমার রুপের ছটা দেখে
দাঁড়িয়ে আছ একলা তুমি
ওই নদীর পাড়ে বকুলের ধারে
আমিও কি থাকতে পারি
দাঁড়িয়ে তোমার পাশে
দিনের শেষে অস্ত নামে
গোধূলি বেলার দিগন্তে
মেরু আলো মিশছে ওই
নদীর পাড়ে বালির চড়ে
সেইখানেতে দাঁড়িয়ে তুমি
দেখছ চেয়ে নদীর পাড়ে
বক পাখির মাছধরা কৌশল
সোনালি বালির ওপর মিশেছে
বকের দুধ-সাদা পালকের সারি
আমি চেয়ে দেখে মুগ্ধ হলাম
সোনালি বিকেলের আলোকিত রুপ

মনেড়ে

মনে পড়ে সেই পুরানো দিন,
যেখানে তুমি আমি, আর আমি তুমি
করেছি কতই না আমোদ, ঘুরে হেতা সেথা।।
আজ শূন্য বুকে,ভাবছি তোমায়,
কত সহজেই ভুলে গিয়েছ আমায়।।
তবে কি ছিল সেগুল! ছলনা?
ভরা নদীর ভরা আনন্দ
আজ,শূন্য নদীর চোরা বালিতে-
জ্যোৎস্নার আলো মুখ ফিরিয়া লয়।
আমি একলা বসে ভাবছি তোমায়...
আসবে আবার কবে, জোয়ারের সাথে।।

সাজিয়ে নাও স্বপ্নকে

অমল ভট্টাচার্য্য
--------------------------------

আজকাল স্বপ্নের রঙগুলো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ,
স্বপ্নেরা হয়েছে স্যাঁতসেঁতে  আবৃত জালে ,
ওদের আজকাল পারিনা উপলব্ধি করতে,
মনে হয় স্বপ্নেরা যেন পচে গেছে ,
স্বপ্নগুলো প্রতিরাতে ছড়ায় গন্ধ স্যাঁতসেঁতে !

আগে স্বপ্নে পেতাম মাটির সোঁদা গন্ধ ,
আজ সে সব অজানা গন্ধ হয়েছে বন্ধ !
স্বপ্ন ভরে থাকে বেকারের হাহাকারে,
স্বপ্ন ভরে থাকে ক্ষুধার্ত শিশুর চিতকারে,
স্বপ্ন ভরে থাকে অনাথের আর্তনাদে,
স্বপ্ন ভরে থাকে ধর্ষিতার কান্নাতে,
স্বপ্ন ভরে থাকে নববধূর চিতার গন্ধে,
আমার স্বপ্ন ভরে থাকে অপবিত্র আঁশটে গন্ধে  !

আমার বয়স হয়েছে,
স্বপ্ন দেখার সময় শেষের পথে !
যারা থাকবে সুন্দর এ পৃথিবীতে,
সাজিয়ে নিক স্বপ্নগুলোকে দেখার মতো করে !

প্রেমিকার নাভিতে ভ্রূণ

মীরাজ হোসেন

.
প্রেমিকার নাভিতে ভ্রুণ
চমকে উঠি
তিলতিল করে বেড়ে ওঠে অাতংক।
.
জোর করে প্রেমিকা
পালাই নিরুদ্দেশ
বিবেকের মথিগলি ঘুরে
অাবার ঘরে ফিরে
প্রেমিকার নাভির ঘ্রাণ শুকি।
.
দূরে কেন?
কাছে এসো প্রিয়মুখ
ক্যামেরায় ছবি তৃলি
অার যে চিত্র রিলিজ হবে
তার রিল রঙিন সুতোয় বুনি ।

রাজ-সত্যের লীলা

- অবার্চীন

শোনো মহারাজ, এই বুঝি কাজ!
এই বুঝি সুশাসন?
অলিতে, গলিতে, বেদীতে, গদিতে
বাদর আস্ফালন!
শোনো মহারাজ, দোষ তব নয়-
মূর্খ প্রজার ভুল,
উল্লুক জনে দেবকূল মেনে
সঁপেছে অর্ঘ্য ফুল।
কুকুরের লেজে ঘন্টা বাধিঁয়া
পুরোহিত কর তারে,
মসজিদ ভার দিলে বেসুমার
কাঠ-মোল্লার ঘাড়ে।
মন্ত্র সাধিয়া আয়াতে বাঁধিয়া
অবোধেরে শুষে খায়,
অনুসারী যত, তোমাদেরি মত
বাকিটুকু লুটে যায়।
আহা মহারাজ বুলি তোমাদের
সর্ব মিষ্ট মধু,
প্রজাহিত কর কেঁদে কেঁদে মর
স্বার্থান্বেষী সাধু!
এই ধারে মারো, দোষ ওই ঘাড়ে
মরে তোদের কেউ?
মরিলে কেহ বা, আবদার উঠে
রাজার পুত্র সেও!
মারো পথে ঘাটে মারো ঘরে হাটে
সন্ত্বান তব নয়,
তবু বলি রাজা, মানুষ সে জন,
পিতা আছে নিশ্চয়!
জেনেছো কি কভু, ও মাটির প্রভু
এ লাশের পরিচয়,
তার আশে যে বা ঘরে বসে, তার-
প্রাণে না  যাতন সয়।
প্রজার লহুতে যেই রাজটিকা
লয়েছো ললাটে ভরি,
তার ঋণ শোধ হবে আলবত
আপন লহুতে তোরি।
গণ-আদালতে সস্তা কালিতে
লিখে দিলাম এই রায়,
কাঠগড়ে তুমি, প্রজার আসামী
দেখি কে তা খন্ডায়!
আমারে শুধাও? কি নাম আমার?
কি আমার পরিচয়?
কি জাত, কি পেশা, কোথা বাড়ি ঘর,
মনে বুঝি সংশয়?
এই রাজ্যেই জন্ম আমার
নাম আলী শংকর,
পেশা কবি কহি, জাতে বিদ্রোহী
বঙ্গে আমার ঘর।

Saturday, December 3

ইতিহাস হয় সময়


দেবব্রত সরকার


শ্রদ্ধা করতে মন চায় মন চায় শ্রদ্ধা করতেই
আপনার জন্য গাল পেতে আহ্বান করি আর্শীবাদ
আপনার জন্য কলম তুলেদিই ইসাকপনের টেক্কা
তাসের ঘর কে সাজিয়ে তুলে জীবন্ত সংসারঘর
সময় এখন ইতিহাস ইতিহাস
 এখন পঞ্চাশ গড় আয়ু ভারতীয়র মতই
তারপর!
তারপর কোন এক নতুন যুদ্ধ সময় বাঁচানোর
প্রেম করে সহবাস করা
যার সাথে সেও কতটা পথ হাঁটে দেখবে সময়
অপেক্ষার দূরত্ব এঁকে রোজনামচায়
ঘর সাজিয়েছে আমার প্রেমিকা
তাকে বেশ লাগছে
আমার সুখের কান্নায় এটা মেয়েরাই পারে !
পারে মেয়েরাই !
যখন কলম রেখে মানুষ হই
তখন ভাবি মেয়েরা আসল হীরের মর্যদায় বোঝেনা
কারণ ওই হীরেটা যমকালো কয়লার ভেতর
দীর্ঘ সময় ধরে থেকে উজ্জ্বলতা ঢেকে রাখে
ঢেকে রাখা সময়,
কখন গড় আয়ুতে হেঁটে যায়
চশমার কাঁচ মুছে ভুল স্বীকার করে খমা চায় আদুরে হৃদয়া
আর চিত্রগুপ্ত পৃষ্ঠা উল্টোয় যমরাজের করা
নির্দেশে শাস্তির প্রোহর গুনে ইতিহাস হয় সময়
যে সময়ের গল্প শুনে ইতিহাস হয়না
ইতিহাস গেঁথে রাখে তাকে শ্রদ্ধা করে
গাল পেতে আহ্বান করি আর্শীবাদের !

তসলিমার সাধ

প্রিয়ব্রত


                সূর্য যখন দিনকে ডাকে 
                          আকাশ টাকে লাল করে                                                                                 ফিরব আমি  তোমার কোলে
                                 সর্ষে ক্ষেতর আল ধরে

                             পাখ-পাখালির কলরবে 
                                   উঠবে গো রোদ উঠোন কোণে
                         দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি
                                             শিশির মেখে ফুলবনে

আশাহত প্রস্তাবনা


বিদ্যুৎ দেব


অমিল বিশ্বাসে দেয় কালো রং ।ওরা দেয় সাম্প্রদায়ীক বীজ বুনে।তল্পি-তল্পা সমেত পালায় নিরীহ প্রাণ।
হতাশা বাগান পেরিয়ে আশ্র‍য় নিই শান্তি গাছ তলায়।পাখির কন্ঠে প্লাইওভার গান।জয়ের প্রার্থনায় দিই রাহু পূজো।

শীতের আবির্ভাব


মোঃইমাম হোসেন দিদার

----------------------
লাগছে গা য়ে শীতের আভা
সন্ধা হবার পারে,
আকাশ বাতাস পাহাড় ফুঁড়ে
শীতযে পড়ছে গা য়ে।

হেমন্তের ঘ্রাণ


সন্দীপ বন্দোপাধ্যায়


কুয়াশার হিমেল চাদর জড়িয়ে হেমন্ত এসেছে পৃথিবীর বুকে ।
সোনালী ধানের গন্ধে ভরেছে চারদিক !
নরম ঘাসের ডগায় কখন যেন নিঝুম রাতের অশ্রূ টলমল মুক্তো হয়ে ঝরে পড়েছে !
মাঠজোড়া সবুজ ধানের দোলাতেও যেন তারই অভিবাদন ।

নিষিদ্ধ বলয়


 কালের ক্যামেরাম্যান

       ____________________
না-বলা সত্যিটা, মনের কোণায় হাসে
দ্বিধার সমাপ্তি খুঁজে ফিরে মন
জন্মেছি যেহেতু, শিকল পড়েই ভবে
সতর্ক পাহারা কেন মিছে পণ।
বেবাক শিখায়, দুর্বোধ্য ধরার বুকে
শিক্ষার সূচনা নেই যেন শেষ
মঙ্গল সাধিতে, নতুন বিধান রেখে
না-এর সাগরে দিন কাটে বেশ।

গরম ধোঁয়া ওঠে ওপরে


মম

...........................................
উঠনের দক্ষিণ কোণে , ধান সেদ্ধর চালা ; কাঠের জোড়া উনুনে , বাগানের ঝরা পাতার জ্বাল দিয়ে , মাটীর একজোড়া হাঁড়িতে সেদ্ধ হয় ; রোজ ভোরে ; গরম ধোঁয়া ওঠে ওপরে ........ নিজেদের জমীর-ই ধান ; উঠনে-ই খেঁজুর পাতার চ্যাটায় ঢেলে , তা শুকনো-ও করা হয় ; তারপর তা ধান কলে ভাঙ্গান হয় ; সে চাল , উঠনের মড়াইএ সঞ্চয় করে রাখা হয় ; সারা বছর তা খাওয়া হয় ; তিন ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে , কর্তা-গিন্নীর সংসার ; কেউই বেশি লেখাপড়া করে নি ; সবাই-ই চাষে খাটে ; সুখের সংসার ;

সবুজ ঘাস


রকি মিত্র


ওরে সবুজ ঘাস,
কতবার তোকে মারিয়ে চলে গেছি
কতবার আমার এই পা তোর বুকে লাথি মেরে-
তারপর একবার চেয়েও দেখেনি।
অথচ তুই আবার দাঁড়িয়ে গেলি!
এই তো সেদিন,

Wednesday, November 16

উপকূল

সোনালী দত্ত


উপকূল ডুবে যায় অন্ধকারে, সমুদ্র হাসে
ঢেউ  এর সফেন দেহ ভরে যায় চাঁদের সুবাসে
পায়ের চিণ্হ বুকে বয়ে চলে সাদা বালিয়াড়ি
প্রান্তর পার হয়ে ছড়িয়েছে জ্যোৎস্নার সারি

Thursday, October 6

উৎসব সংখ্যা-১৪২৩

অতিথি সম্পাদকীয়

পায়েল সামন্ত

গুচ্ছকবিতা

অভিষেক ঘোষ
রায়হান মুশফিক
সুরজিৎ সী, সৌরভ আহমেদ সকিবসকিব

কবিতা 

আনিসুর রহমান 
গোপাল দে 
দেবাশিস মুখোপাধ্যায় 
দ্বীপ সরকার 
নরেশ রায় 
মাসুম খান 
রাশেদ

নিঃসঙ্গ মহাত্মা ও এক রক্ষী




পায়েল সামন্ত
°°°°°°°°°°°′°°°°°°°°°°°°°°
কটিতে চলেছে প্রায় তিনশো বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল । রাত প্রহালেই উদিত হবেস্বাধীন ভারতের নতুন সূর্য । রাজধানী দিল্লি সহ প্রহর গুনছে পরম আকাঙ্ক্ষিত লগ্নের । পিছিয়ে নেই শহর কলকাতাও । কিন্তু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এই রুপান্তরের প্রধান নায়ক । প্রশ্ন করছেন নিজেকে , হাজার হাজার, তাজা প্রানের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা এলো  ,যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ` জাতির জনক ` সেই লক্ষ্য কি পূরণ হলো? তাঁর নিজের কাছে এর উত্তর 'না' ।

খণ্ডিত এই স্বাধীনতআ তো তিনি চাননি মহাত্মা । অথচ পরিস্থিতির এই বাধ্যবাধকতায় তাঁকেও মেনে নিতে হলো দেশভাগ । যন্ত্রনায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাঁর হৃদয়ে । তাই তিনি দিল্লির মূল অনুষ্ঠানে নেই । স্বাধীনতা উদযাপনের আনন্দ উৎসব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে একাকী বিনিদ্র রজনী যাপন করছেন কলকাতায় বেলেঘাটার হায়দারি মঞ্জিলে । নিঃসঙ্গ নায়ক পায়চারি করছেন অন্ধকার ঘরে । তাঁর সেই যন্ত্রনআর সাক্ষী ছিলেন একজনই । তিনি মহাত্মার দেহরক্ষী এক বাঙালি পুলিশ অফিসার , নাম হেমন্ত সেনগুপ্ত ।

নির্বাসন

সুকুমার সরকার
এবার আমাকে নির্বাসন দিও
কোনো শোভনীয় তৃণভূমে !
সে পথ যত কঠিনই হোক

Monday, October 3

এক প্রকারের নিরীশ্বর অভিযোগ

দে ব জ্যো তি কা জ ল



ভাদর এসেছে , কুকুরদের মেলা খেলা দেখে আন্দাজ করা যায় | কি চরম সুখ আটকে আছে তল পেটে | দু-দিক থেকে টানাটানি ছায়াতুর মোহ | স্নেহপ্রতিম ঢেউ ক্ষতের লোভ | তবুও টানা হেঁচড়া , সমূহ ডুবে যাচ্ছে বুঝা যায় না | হ্যাঁ , যায় না ...যায় না ; ভাদর থেকে ভাদর | পাঁচ থেকে পাঁচ বছর | ধর্ষক থেকে ধর্ষিতা | খুনি থেকে রক্ত | এভাবে পালক প্রাণ ছিঁড়ে পরে | সকালবেলা

Friday, September 30

আমিও তো মানুষ

দ্বীপ সরকার
বস্তা বস্তা নীল, কষ্টদের মিমাংসিত
অধ্যায়ের চিঠি পড়ে থাকে হলুদ খামে,
কেউ ছুঁয়েও দেখেনি বলে
বিভৎস দেখে ছায়াহীন রোদ,
ওপাশে পুরনো কষ্টের চাকু উন্মুখ থাকে,
কেটেকুটে পার হওয়া চাকু কখনো
আত্নীয় হতে পারেনা।
তবু সহ্যের আলোয় নিজেকে বিকশিত করি।
আমি আকাশ। চারপাশ দুরন্ত নীল।

Friday, September 23

বন্ধ দুয়ার


শ্রাবণ আহমেদ হিমু
------------------
যদি কখনও দেখ কুয়াশা ঝরা দুর্বা ঘাস, 
ভেবে নিও সেথায় আমি ছিলাম মাড়িয়ে যেও।
যদি সূর্য তেজদীপ্ত হয় ছিটানো আলোর ঐশ্বর্যে, তবে -
ভেবে নিও সেথায় আমি ছিলাম নিজেকে আড়াল করে নিও। 
যদি আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি নামে মুষলধারে
ভেবে আমায় কোন ছাঁদের তলায় নিজেকে আশ্রয় দিও।
কোন পূর্ণিমার রাতে যদি জোৎস্নার রূপালী আলো ঝলসে দেয় তোমার আঙিনা -
ভেবে আমায় জানালা করে দিও বন্ধ।
পাহাড়ী বাতায়নে অপার সবুজ যদি হঠাৎ দেখ অবাক করা,
ভেবে আমায় বন্ধ আঁখি চেপে নিজেকেই বলো তুমি অন্ধ।
ক্ষরস্রোতা নদীর প্রবাহ যদি দেখ অনেক উত্তাল 
ভেবে আমায় সরে যেও সীমানার ওপারে অনেক দূরে।
ঝরণা’র অববাহিকার অরূপ মোহে যদি পড়ে যাও
ভেবে আমায় যাও পথ পরিবর্তনে দিকে’র মোড়ে।
ঘাসে ঢাকা মেঠোপথ যদি ভাল লাগে হঠাৎ -
ভেবে আমায় মাড়িয়ে যাও সে পথ পদতলে।
আকাশের নীল শুন্যতা দেখে যদি মুগ্ধ হও 
ভেবে আমায় ডুবে যাও আপন মনের অতলে।

Wednesday, September 21

কাঁচের মেয়ে

ইতি সামিয়া

আমার বিয়ে হয়েছিলো মাঘ মাসের উনিশ তারিখে, সেদিন আমি প্রতিদিনের মতই স্কুলে গিয়েছিলাম ক্লাস নিতে, পড়াশোনা ইন্টারের পর আর হয়নি, অভাব অনটনে আর বখাটেদের উৎপাতে সেটা ছেড়ে দিয়েছিলাম তখন প্রায় পাঁচ বছর। আমি ছিলাম প্রাইমেরি স্কুল শিক্ষক। সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর মা বাবা ছোট ভাই বোনের মুখে শুনলাম যে ওই দিনই আমার বিয়ে। বর পক্ষ ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছে সন্ধার আগেই পৌঁছে যাবে।
বাবা বলল ছেলে ভালো শহরে থাকে নিজের ফ্যাক্টরি  আছে তুলার না কিসের যেন। বাবা নিজেও জানেনা ছেলে ঢাকা কোথায় থাকে কি করে কিংবা কীসের ফ্যাক্টরি, অথচ তার মেয়েকে তার হাতে বিনা দ্বিধায় তুলে দিতে যাচ্ছে সারাজীবনের জন্য।
আমি একটু মিন মিন করে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মায়ের অসহায় দুঃখী চেহারাটা আমায় বাধ্য করলো অন্যায় মেনে নিতে। বিয়ের রাতে দেখলাম সে মোটেও ছেলে নয় বছর পঞ্চাশ তো হবেই বয়স। ভাসা ভাসা এও কানে এলো আগে আরও দুইটা বিয়ে তার, তারা তাকে ফেলে কোথায় নাকি চলে গেছে। তাদের মতে খারাপ মেয়েমানুষ ছিল তারা। কোন ছেলেমেয়েও তাদের হয়নি।
সে আমার বয়সে দিগুণ এবং বড্ড কুৎসিত ব্যবহার ঠিক যেমন সে দেখতে, আমি চোখ মুখ বুজে সমাজের নিয়মের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে লাগলাম।
এসবের মাঝেই নিজেকে সুখি করার কি যে অদম্য চেষ্টা আমার। আমি এই কুৎসিত লোকের সাথেই দিন দেখি রাত দেখি বাইরে বের হই আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাই।
এইরকম ভাবেই বছর দুই কেটে গেলো আমার কোল আলো করে এলো আমার প্রথম সন্তান। কিন্তু সে মেয়ে বলে স্বামী শশুর শাশুড়ির কাছ থেকে প্রতিদিন শুনতে হচ্ছে অবর্ণনীয় গালি গালাজ, কেননা তাদের বংশের প্রদীপ দেয়ার জন্য ছেলে সন্তান চাই-ই চাই। মেয়ে কোন মানুষের পর্যায়ে পড়ে নাকি!! এভাবে আরও একটা বছর কেটে গেলো, আমার গর্ভে আর সন্তান কেন এখনও আসছেনা তাই তাদের অত্যাচার বেড়েই চলল। আমি কেবল দাঁত মুখ চেপে সহ্য করতে থাকলাম যন্ত্রনা।  
এমনি এক সময়ে একদিন এক অদ্ভুত 
মেয়েকে দেখলাম। মেয়েটিকে আমি একবার দেখলে হয়ত অত মাথা ঘামাতাম না। কিন্তু পরপর অনেকবার দেখা হওয়ায় ব্যাপারটা আমায় ভাবাচ্ছে।

আমি মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিলাম শপিংমলে সে হেসে হেসে ২টা মেয়ের সাথে খুব জমিয়ে গল্প করছিলো, কেউ বলে না দিলেও বোঝা যায় ওই ২টা মেয়ের মধ্যে সেই বস। ওর কথার উপরে একটা কথা বলার সাহস মনে হয় না মেয়েগুলোর মধ্যে কারো কখনো হয়েছে।
মেয়েটিকে রূপবতী বললে ভুল বলা হবে, মেয়েটি যেন তুলনার ও উর্ধে, ওর স্বচ্ছ কাঁচের মতন ত্বক অদ্ভুত তেজী চোখ স্বাভাবিক ভাবেই ভীষণ রকম আলাদা করে ফেলে সবার থেকে।
আমি একটা মেয়ে হয়েও বার বার ঘুরে ঘুরে মেয়েটিকে দেখছিলাম কারন, হয়ত কখনো নিজেকে ওর মতই ভাবতাম কিংবা এই রকম একটা মেয়ে হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।  
মেয়েটা আমার দিকে একবারও তাকায়নি তবু যতবার আমি ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম একটু অজানা অস্বস্তিতে চোখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছিলাম, কেনোনা আমার ভীষণ রকম  মনে হচ্ছিলো মেয়েটি এত দূর থেকেও আমার ভেতরটা পড়ে ফেলতে পারছে, ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওকি আমার দিকে চেয়ে ঈষৎ হাসলো!! কি জানি! 
আমার সাথে আমার দিগুন বয়সের কুৎসিত স্বামী বিকট শব্দ করে নাক দিয়ে গোৎ গোৎ শব্দ করতে করতে আমার পিঠে হাত রাখতে রাখতে বলল খানকী মাগী এদিক ওইদিক কি দেখোস আরও বিয়া বসার শখ হইছে নাকি? জামাই খুঁজোস? আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম! আশেপাশের মানুষ কি শুনতে পেয়েছে কিছু!!!

মেয়েটিকে আরেকদিন দেখলাম ফাল্গুন বাসে, গাড়িতে উঠেই দেখলাম সে সামনের দুই সারি পরেই বসা, সাথে ওই মেয়ে দুইটিও, একি রকম মেয়েটি আমার দিকে তাকাচ্ছে না, যদিও মনে হচ্ছিলো ও আমাকে দেখছে, আমার স্বামী জানালার পাশে বসেছিলো কেনোনা বাসে উঠলেই সে বাঁধ ভাঙ্গা বানের জলের মত হরহর করে বমি করতেই থাকে, এত বমি কি করে যে আসে কে জানে, সেদিনও একই ঘটনা, বাসে উঠেই সে তার বিখ্যাত বমি করা শুরু করলো, মেয়েটি আমাকে দেখছে না কিন্তু আমার কেন মনে হচ্ছে যে ও আমার দিকেই চেয়ে আছে!! এবং এই যে আমি যন্ত্রনায় লজ্জায় একদম মরে যাচ্ছি ও যেন তা বইয়ের পাতার মত পড়ে ফেলতে পারছে। 
আমার দিগুন বয়সের স্বামী বমি করেই যাচ্ছে দুই এক সেকেন্ডের জন্য আমার দিকে ফিরে কুৎসিত হাসি হাসছে, একবার বলল মাগী পানি দে পানি নিয়া আসোস নাই!! আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো বাসের জানালা দিয়ে বাইরে ঝাঁপিয়ে পরে পালিয়ে যেতে। আমার  বাচ্চা মেয়েটি সেদিনই আমাদের সাথে প্রথম বাসে চড়েছে , সে তার বাবার এই রুপের সাথে পরিচিত নয়, বার বার আমাকে বলছিল মা মা বাবা বোধহয় মরে যাচ্ছে। বাবা বোধহয় মরে যাচ্ছে। 
সত্যি সত্যি যদি মরে যেত!!
মেয়েটিকে তৃতীয়বার দেখেছিলাম গুলশান লেকের পাড়ে। সাথে ওই দুই বান্ধবী। প্রথমে তাকে চিনতে পারছিলাম না, সে দিনের আলোয় আরও ঐশ্বরিক রুপে যেন ঝকঝক করছিলো। কাঁচের মেয়ে;  মনে মনে বললাম। আমার স্বামী গেছে সামনের এক ঝোপে  প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে, রাস্তায় বের হলেই ঘন ঘন প্রকৃতি তাকে ডাকে। আমার ধারনা তার ডায়াবেটিস আছে। ঝোপ থেকে বের হয়ে এসে বলল বেশ্যা নিয়া সংসার করি কোথাও গেলে কত যে জ্বালা! এসব নিয়ে রাস্তা ঘাটে চলা যায়! লজ্জায় ঘৃণায় আমার চোখ ভরে এলো টপ টপ করে পড়তে লাগলো গাল বেয়ে, সারাক্ষন এসবই শুনতে হয় তবু কেন যে এত কষ্ট লাগে! 

আমি মেয়েটিকে চতুর্থ বারের মত দেখেছিলাম! অবশ্য ওটা ছিল চতুর্থ এবং শেষবারের মত দেখা। এরপর মেয়েটিকে আর কখনো দেখিনি। যদিও আমি মনে প্রানে চাই মেয়েটির সাথে আমার আর একবার দেখা হোক। ওকে একটু জড়িয়ে ধরে কাঁদার জন্য হলেও আর একবার দেখা হোক।
সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত, আকাশে রূপালী রঙের ঝকমকে চাঁদ উঠেছে। দিনের আলোর মত স্বচ্ছ সব। আমি আমার শশুর বাড়ির চারতলার ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম। সব কিছু এত পরিস্কার!! আমার শ্বশুর বাড়ির সামনে দিয়ে যে মেঠো পথ এঁকেবেঁকে একবারে নালায় যেয়ে মিশেছে সেই পর্যন্ত সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো, এমনি কোন এক সময় উনারা এলো  ঠিক আমার পেছনে, যেই না আমি ঘাড় ঘুরাতে যাব এমনি সময় তাদের একজন পেছন থেকে আমার চুলের মুঠি খামচে ধরলো, চুলের মুঠি সম্ভবত আমার স্বামী  ধরেছিলো কেনোনা পেছন থেকেও আমি তার মুখের কড়া ওই গ্যাসটিকের পঁচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। আমি ধরে নিয়েছিলাম ওটা আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত।
পেছন থেকে উঁচু করে খুবি দ্রুতগতিতে ধাক্কা দিলো কেউ আমাকে।
আমি নীচে পড়ে গেলাম না। পড়ে যেতে যেতে  অনুভব করেছিলাম আমি স্থির হয়ে আছি, বাতাসের উপর ভাসছি।
আর খুব মমতা নিয়ে সেই কাঁচের মেয়েটি আমার  মুখের দিকে ঝুঁকে আছে, হায় তার দুই চোখ দিয়ে কি দুই ফোঁটা কাঁচের জল গড়িয়ে পড়লো। এত রাতে সে কি করে এলো এখানে!

এরপর কত কিছু হয়ে গেলো আমার আর কিছুই মনে পড়েনা।
আমি আমার মেয়েটিকে নিয়ে এখনও বেঁচে আছি, সে এবার একুশ বছরে পা দিবে। মাঝে মাঝে তার চেহারা কাঁচের মত ঝকমক করে ওঠে আর আমি ভেতরে ভেতরে ভীষণ চমকে যাই।