Friday, December 9

বেশ্যাবৃত্তি ও পর্ণোগ্রাফি পরস্পরের পরিপূরক

চিন্ময় মণ্ডল
আদি প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে নব্য প্রস্তর যুগের হাত ধরে বর্তমানে মানবসভ্যতা ন্যানো টেকনোলজিতে উপনীত হলেও উন্নত ভোগবাদী মানসিকতার বিকাশ ক্রমবর্ধমান যা সুন্দর সুস্থ সমাজব্যবস্থা গড়ার অন্তরায়।কেননা বর্তমান সভ্যতার প্রেক্ষাপটে যৌনব্যবসা বা গণিকাবৃত্তি ও পর্ণ সাইট এর মতো ঘৃণ্যতম সামাজিক ব্যাধিকে টিকিয়ে রাখার সুপার পাওয়ার হল ভোগবাদী মানসিকতা। যেহেতু ভোগবাদী চিন্তার অন্যতম হল যেনতেন প্রকারে জীবন কে উপভোগ করা।এই রাজনৈতিক নেতা-মস্তান, পুলিশ - প্রশাসন, হোটেল রিসর্টের মালিকদের সসম্মিলিত প্রয়াসেই আজকের এই যৌনব্যবসা ও পর্ণোগ্রাফির বাড়বাড়ন্ত, যা রাস্ট্র সযত্নে লালনপালন করে যাচ্ছে,কেননা যখন দেখছি উন্নত দেশ গুলো পর্ণোগ্রাফি বা পর্ণোসাইট বন্ধের তাগিদ অনুভব করছে তখন আমাদের রাস্ট্র নায়করা "নাগরিকের ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ" কোরতে নারাজ বনাম নৈতিকতার ভোট বাক্স স্ফীতের তল্পিবাহক এর ভুমিকায় মহানুভবতার প্রতীক,সত্যি নাগরীক দের শয়ন কক্ষে উকি মারা কি রাষ্ট্রের কাজ

!আবার উন্নত দেশগুলো যখন আম পাবলিকের জন্য যৌনশিক্ষা কে আবশ্যিকরনের প্রয়াস চালাচ্ছে,তখন আমাদের রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়করা আমজনতা কে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মিলিত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।এ ক্ষেত্রে পর্ণোসাইট ও গণিকাবৃত্তি বন্ধ করাতো দূর-অন্ত যৌনশিক্ষাকেই আবশ্যিকরন করার সদিচ্ছাটুকু দেখানো হচ্ছে না,আর রাষ্ট্র করবেই বা কেন? করলে তো ভোগবাদ বা পুঞ্জিবাদ ধ্বসে পড়বে।তাহলে রাষ্ট্র শোষণ ব্যবস্থা অব্যহত রাখবে কি করে!আর সমাজে নারী-পুরুষের মধ্যে সুস্থ যৌন সম্পর্কের ভারসাম্য বাজায় রাখার ক্ষেত্রে গণিকাদের উপস্থিতি অনিবার্য দেখানো হচ্ছে আর পর্ণোসাইট বন্ধ না করার সাপেক্ষে টেকনিক্যালি অজুহাত খাড়া করা হচ্ছে। "ডিজিটাল ইন্ডিয়া,মেক ইন ইন্ডিয়ার নামে যতসব ধাপ্পাবাজি!এ তো গেলো রাষ্ট্রের কথা,আবার আজ সমাজের যারা স্ট্যাটাস সিম্বল যেমন মডেল,অভিনেত্রী এরা এখন নিজেদের বহুগামিতা বা লাম্পট্য যৌনচারীতাকে ব্যাক্তি স্বাধীনতার ব্যপার বলে চালান দিচ্ছে বা দেওয়ার ছুঁতু খুঁজছে,এই ধরনের যৌন লাম্পট্য কে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় 'নিমফোম্যানিয়া' বলে,কারন এ ধরনের যৌনতা কখনই সুস্থ যৌনতার লক্ষ্যন নয়।এককথায় বিকৃতকাম,আর যাই হোক এই ধরনের ব্যাক্তি স্বাধীনতা সুস্থ সমাজ ব্যাবস্থার কাছে কাম্য নয়,কেননা এই স্বাধীনতার মধ্যে কোনোও মতাদর্শ নেই,নেই কোনোও দার্শনিক ভিত্তি,নেই কোনোও নৈতিকতাবোধ,আছে শুুধু যৌন উচ্ছৃংখলতা যেটা তাত্ত্বিকভাবে বা ব্যাক্তিগতভাবে স্বাধীনতা নয়।সম্প্রতি প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতেই সবচেয়ে বেশি যুকক- যুবতী আছেন,১০-১৪ বছর বয়সী যুবক-যুবতীর সংখ্যা ৩৫৬ মিলিয়ন,দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। এই সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা যুবক-যুবতীরা যদি আজ যৌনশিক্ষার প্রাথমিক পাঠটুকু না পায় তাহলে অ্যান্ড্রয়েডের চটকদারিতায় হাইডেফিনেশন পর্নোগ্রাফির উষ্ণ অনুভুতি তো বিকৃত কামের জন্ম নিতে বাধ্য। কেননা মনোবিজ্ঞানের মতে অতৃপ্ত কামনা বা বাসনা কৈশোর মনকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়,এই অবদমনই ভবিষ্যতের বিকৃত কামের রুপরেখা তৈরির প্রাথমিক ধাপ,যদিও আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ সংযম,অবদমনের নামে ভন্ডামীর শিক্ষাই এযাবৎ দিয়ে আসছে।বর্তমান সভ্যতার অন্তরালে প্রবাহিত হওয়া বিকৃত কাম এবং আদিম বর্বর যুগের বন্য নিষ্ঠুরতা,প্রলোভন,লালসার বিকৃত প্রতিচ্ছবিই হচ্ছে আজকের "রেপিস্ট"। এই অবদমন সংযমের নামে ভন্ডামী করে স্বঘোষিত অলৌকিক বাবাজী আসারাম বাপু থেকে শুরকরে শত সহস্র রেপিস্ট তাদের বিকৃত যৌনলালসা চরিতার্থ করতে আমাদের সমাজের আড়ালে আবডালে রয়েছে।ভোগবাদের দংশনে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে মানব সভ্যতার বিকাশের ধারা।
এসব সত্ত্বেও এই বেশ্যাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফি বা পর্নোসাইট সমূলে নির্মূল করতে রাষ্ট্রের এত গড়িমসি কেন? প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক যে আজ যদি কোনও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বা পদস্থ আমলার নিকটাত্মীয়া কোনো বিকৃতকামির যৌনলালসা চরিতার্থের শিকার হন এবং সেই পাশবিকতা যদি অজস্র পর্নোসাইটে ছড়িয়ে পড়ে তখন কি রাষ্ট্র এই গড়িমসি ভাব দেখাবে? উত্তর- অবশ্যই না। তখন হয়তো চব্বিশঘণ্টার আগেই অপরাধীকে ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড়করবে।এমনকি ওই পর্নোসাইট সহ সমস্ত পর্নোসাইটই কয়েক ঘন্টায় হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।কিন্তু আজ যে শত সহস্র তাজাপ্রান কারো না কারো পাশবিক বিকৃত যৌনতার শিকারে অকালে ঝড়ে পড়ছে তারাও তো কারো না কারো নিকটাত্মীয়া,তাঁদের জন্য কি রাষ্ট্রের কোনোপ্রকার দায়বদ্ধতা নেই? স্মৃতির দংশনে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে মানবিকতা।বিকৃত যৌনতার পাশবিকতা কে ক্ষীন নয়,সবল প্রতিবাদ জানাচ্ছে প্রতিটা মানবতাবাদী বন্ধু।

No comments:

Post a Comment

লেখা পড়ুন এবং মতামত জানান ।