Friday, October 14

সুকুমার সরকার

বাংলাদেশের জনসংখ্যার চাপ , ভারত-বাঙলার অর্থনৈতিক চাপ -- দুই বাঙলাকে এক করতে পারবে কি ?


"লেবেনস্রম ( lebensraum ) চাই " -- নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একদল মানুষ এই শ্লোগান তুলে মিছিল করেছিলেন । ফরাসি এই ' লেবেনস্রম ' কথাটির অর্থ হলো , জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুযায়ী আবাসযোগ্য ভূমি চাই ! আর এই ভূমি তারা দাবী করেছেন প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের কাছে । মিছিলে হাঁটা এই মানুষগুলি ধর্মমতীয় মৌলবাদী কিংবা জঙ্গিবাদী কিংবা বুদ্ধিজীবী -- যারাই হোক না কেন , তাদের দাবী যে অমূলক নয় ; একটু খুঁটিয়ে দেখলেই তা বোঝা যায় ।

এই পৃথিবীতে মানুষ যে অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, সেটা তার মৌলিক অধিকার । এই অধিকার মানুষকে দিয়েছে এই বিশ্ব প্রকৃতি । মানুষ প্রকৃতির সন্তান । আবার এই বিশ্ব প্রকৃতি বাঁধা আছে পরমপুরুষের লীলা খেলায় । সুতরাং প্রকৃতিতে মানুষ কোথায় জন্মগ্রহণ করলো সেটা বড় কথা নয় ; বড় কথা , মানুষ কতটা মানুষের মর্যাদায় বেঁচে থাকতে পারলো । বিশ্ব প্রকৃতিতে এটাই স্রষ্টার বিধান । এই বিধানে এই পৃথিবীর আলো-বাতাস , জল- মাটি কারও একক সম্পত্তি নয় । জন্মসূত্রে এই পৃথিবীতে সকল জীবেরই সমান অধিকার আছে বেঁচে থাকার । তা সে মানুষ, পশু-পাখি-উদ্ভিদ যে কোনো জীবই হোক না কেন । কারও কোনো অধিকার নেই , সেই অধিকার খর্ব করার । জন্মের দ্বারা মানুষ স্বাধীন এবং এই স্বাধীনতায় মানুষের অধিকার আছে তার সুবিধা মতো পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসবাস করার । কিন্তু অতীতের বাহুবলী রাজারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশভাগ, রাষ্ট্রভাগ করে নিয়েছে নিজেদের বাহুবলী ক্ষমতার দ্বারা কিংবা লোভের ভাগ বাঁটোয়ারার দ্বারা । আর তাতেই খর্ব হয়েছে মানুষের অধিকার । মানুষ বন্দি হয়েছে মানুষের তৈরি রাষ্ট্রসীমা দ্বারা । মানুষ শোষিত বঞ্চিত হয়েছে -- কোথাও অর্থনৈতিক ভাবে , কোথাও ভৌগলিক ভাবে । কোনো দেশে মানুষ খাদ্যাভাবে মরছে , কোনো দেশে খাদ্যের প্রাচুর্যে খাদ্য দ্রব্য নষ্ট হচ্ছে । কোনো দেশে অপ্রতুল জনসংখ্যা , কোনো দেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ।
পঞ্চান্ন হাজার বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশে আজ প্রায় কুড়ি কোটি জনসংখ্যার বাস । তিনদিকে ভারত রাষ্ট্রের কাঁটাতারের বেড়া । একদিকে উত্তাল সমুদ্র । মাঝখানে খাঁচায় বন্দি বাংলাদেশের মানুষ ! অথচ একদিন এই বাংলাদেশে ছিল অখণ্ড ভারতবর্ষেরই অংশ । ভারতবর্ষের যে কোনো রাজ্যে অবাধ বিচরণ এবং বসবাসের অধিকার ছিল এই বাঙলার মানুষদের । নেহেরু-জিন্নাহ তাঁদের লোভের ভাগ-বাঁটোয়ারার দ্বারা সেই অধিকার খর্ব করেছেন । 1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ, রাষ্ট্রভাগ করে বাঙলা ও বাঙলার মানুষকে দ্বিখন্ডিত , ত্রিখণ্ডিত করে বিভিন্ন রাজ্য ও রাষ্ট্রের অবগুন্ঠনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন নেহেরু-জিন্নার গদির লোভ । সেই থেকে ধুকে ধুকে মরছে বাঙলা ও বাঙালি । ধুকে ধুকে মরছে আপামর ভারতবাসী । রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়ে বাংলাদেশের মানুষ আজ কুড়ি কোটি জনসংখ্যার চাপে বন্দি দশায় কালাতিপাত করছে । বাঁচার জন্য লেবেনস্রমের দাবী তুলে মিছিল করেছে । সেই দাবী কি খুব অনায্য দাবী ?
কুড়ি কোটি মানুষের অন্ন-বস্ত্রের জোগান নেই । শিক্ষা চিকিত্সা বাসস্থানের নিশ্চয়তা নেই । দেশ বিদেশের দান খয়রাতি আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কোনো মতে স্বাধীকার বজায় রেখে টিকে আছে নিজস্ব একটি লাল-সবুজের পতাকার রঙে । ভারত না চাইলেও লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি প্রতিনিয়ত ঢুকছে ভরতে । ঢুকছে বৈধ অবৈধ দু'ভাবেই । লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি জীবন জীবিকার তাগিদে পাড়ি দিচ্ছে আরব , ইরান , আমেরিকায় । নিতান্তই না হলে যেতে বাধ্য হচ্ছে পাকিস্থান, আফগানিস্থান কিংবা সিরিয়ার জঙ্গি শিবিরে । যেতে বাধ্য হচ্ছে জনসংখ্যার চাপে । বাসস্থানের অভাবে । বাঁচা বাড়ার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে । পৃথিবী নামক এই গ্রহে যে অধিকার সে পেয়েছে জন্মের দ্বারা ।

একুশ শতকে শিল্প-বাণিজ্যের নব অর্থনীতির যুগে কেবল মাত্র কৃষির ওপর নির্ভর করে একটি দেশ চলতে পারে কী করে ! কুড়ি কোটি থিক থিক জনসংখ্যার দেশে অত মানুষের অন্ন ,বস্ত্র , বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিত্সার জোগানের ব্যবস্থা হবে কোথা থেকে ! কৃষিতে যা উত্পাদন হচ্ছে গোগ্রাসে গিলছে কুড়ি কোটি মানুষ । তাতেও চাহিদা মিটছে না । খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল দ্রব্য জোগানেও নির্ভর করতে হচ্ছে আমদানী বাণিজ্যের ওপর । আর এই সুযোগে বাজার ধরতে মরিয়া তাবৎ পুঁজিবাদী বিশ্ব ।
বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্র । ভারতও মরিয়া বাংলাদেশের বাজার ধরতে । হাজারো বানিজ্য তরী ( ট্রাকে , বাসে , ট্রেনে , জাহাজে ) নিয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতের বানিজ্য সম্প্রসারণ । যে কারনে ভারত পাকিস্তান ভাগ হয়েছিল সেই ধর্মমতের জিগিরে কোটি কোটি মানুষের অন্ন ,বস্ত্র, বাসস্থানের এবং ভাষা-সাংস্কৃতিক অধিকারের পূর্তি হয়নি । পূর্তি হয়নি বলে পূর্ব পাকিস্থান পশ্চিম পাকিস্থান থেকে ছিন্ন হয়ে জন্ম দিয়েছে লাল-সবুজ পতাকার স্বাধীন বাংলাদেশের । ছিন্ন হয়ে বাঁচার দাবী খুঁজছে একই ভাষা-সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে । এ দাবী কোনো অনায্য দাবী নয় ।

আবার ভারত এত যে বানিজ্য তরী ভাসিয়েছে প্রতিবেশি বাংলাদেশের অসংখ্য নদী নালার মতো বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক , সাংস্কৃতিক প্রবাহে ; যার ফলে কাঁটাতারের বেড়া আর আলাদা পতাকা ছাড়া অবশিষ্ট আলাদা কিছু থাকছে কি ?
ভারত শুধু পণ্যই পাঠাচ্ছে না ; পণ্যের সঙ্গে যাচ্ছে পণ্যের বিজ্ঞাপন । বিজ্ঞাপনের ভাষা । পোশাক । খাদ্যাভাস । যাচ্ছে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান । চিকিত্সার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা দিচ্ছে ভারত সরকার । লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি চিকিত্সার জন্য প্রতিদিন ঢুকছে ভারতে । লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি মুদ্রা আয় করছে ভারত রাষ্ট্র ।

বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ আমেরিকার কাজ করে । তাঁদের শ্রম বিক্রি অর্থে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি এখন অনেকটাই চাঙ্গা । মানুষের স্বচ্ছলতাও বেড়েছে আগের চেয়ে । তাঁরা সেই আর্থিক স্বচ্ছলতায় ঘুরতে আসে কাছের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভরতে । ফলে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ভারতের পর্যটন বানিজ্যও লাভবান হচ্ছে । এই রকম নানাবিধ কারনে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি আজ ভারত ভূখণ্ডে ঢুকছে । ঢুকছে জন ঘনত্বের কারণেই । আবার এই জন ঘনত্বকে লক্ষ্য করে ভারতের হাজারো বানিজ্য তরী ঢুকছে বাংলাদেশে ।

সুতরাং একদিকে যেমন বাংলাদেশের জনসংখ্যার চাপ বাংলাদেশ আছে ভারতের দিকে ; অন্যদিকে ভারতের অর্থনৈতিক চাপ আছে ভারত থেকে বাংলাদেশের দিকে । আবার দুটো রাষ্ট্রই সাতচল্লিশ পূর্ববর্তী ভাষা-সাংস্কৃতিক , আর্থ-সামাজিক , নৃতাত্ত্বিক সকল দিক থেকেই ভারত রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল । পার্থক্য ছিল শুধু চাপানো ধর্মমতীয় মানসিকতায় । যে ধর্মমতের কারনে বাঙলার বাঙালিরা বিভাজিত হয়ে অখণ্ড ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ববঙ্গকে পাকিস্থান বানিয়েছিল , চিরকালীন অসাম্প্রদায়িক চরিত্র সেই বাঙালিরা ধর্মমতীয় ঐক্য ছিন্ন করে আবার সেই বাঙালি জাতিসত্তাকে বড় করে তুলেছে তার স্বাধীনতা আদায়ের মধ্য দিয়ে ।
উনিশশো একাত্তর খ্রিস্টাব্দে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সেটাও ছিন্ন করেছে বাংলাদেশের বাঙালিরা । এবার শুধু অপেক্ষা, বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণে কবে দুই বাঙলা এক হবে !

এক হতেই হবে ! কেন না, পুঁজিবাদী বিশ্বায়নে যতই আমরা আন্তর্জাতিকতার কথা বলি না কেন ; আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদ প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো ভৌম অঞ্চলই স্বয়ংসম্পন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে না ! পুঁজিবাদী বিশ্বায়নে পুঁজির বিনিয়োগ এবং পণ্য বিপননই থাকে মুখ্য উদ্দেশ্য । সেই উদ্দেশ্য পূরণে পুঁজিপতিরা ভৌম বৈচিত্র্য নষ্ট করে মানুষের চাহিদা ও জোগানকে একই করে তোলে । এতে করে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য ধ্বংস হয় ।

আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদ প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য তা প্রতিটি নির্দিষ্ট ভৌম অঞ্চলের ভৌম জাতিসত্তা, ভৌম ভাষা-সংস্কৃতি , ভৌম অর্থনীতি , ভৌম অখণ্ডতার প্রশ্ন জড়িত থাকে ।

ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার সময় বাঙলা ভাগ হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব-পাকিস্তান হওয়াটা সেই আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির শর্তের পরিপন্থী ছিল । বিভাজিত হয়ে অখণ্ড বাঙলার শিল্প সমৃদ্ধ প্রায় সমস্ত অঞ্চল ভারত রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পড়েছে । ফলে কাঁচামাল জোগানকারী পূর্ববঙ্গের পাটসহ সমস্ত কাঁচামাল উত্পাদনকারী কর্ষকেরা পড়েছে বিপদে । অন্যদিকে পূর্ববঙ্গে উত্পাদিত উন্নত মানের পাটের জোগানের অভাবে পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্প গুলি বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে । অর্থাৎ একই সম্পদ ও সম্ভাবনার ভৌম বাঙালিস্থান দু'টুকরো হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উভয় বঙ্গের অর্থনীতি ।

ভাষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ! পশ্চিমবঙ্গের ভাষা-সংস্কৃতিতে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি বাঙালির জাতিসত্তাকে প্রায় গ্রাস করে ফেলছে !

বাংলাদেশের ভাষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা! একদিকে বিশুদ্ধ ইসলামিকী করনের নামে বেমানান ভাবে আমদানী করা হচ্ছে আরবি ফার্সি ভাষার । অন্যদিকে ব্যাপকভাবে ঢুকতে শুরু করেছে পণ্যবাহী হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি ! আজকাল বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম অকারণ হিন্দি বলছে । বাংলাদেশের নাটক সিরিয়ালেও হিন্দি ডায়ালগ ঢুকানো হচ্ছে । এ সবই বাঙালি জাতির ভাষা-সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তরায় । আর এই অন্তরায়ের প্রধান কারণ বাঙলা ও বাঙালির ভৌম খণ্ডিত করণ ।

অতীতের এক ভুলে সমগ্র বাঙলা ও বাঙালিকে আজ যে চরম অবক্ষয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে , তা থেকে বাঙলা ও বাঙালি মুক্ত হতে চাইলে বাঙালিকে এক হতেই হবে । রাষ্ট্রীয়ভাবে না হোক ; ভাষা-সাংস্কৃতিক ভাবেও এক হাওয়া যায় । হতে পারে পৃথিবীর কোনো ভৌম অঞ্চল রাজনৈতিক ভাবে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে আছে । কিন্তু আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে একই । সে ক্ষেত্রে একই ভাষা-সংস্কৃতি অর্থনৈতিক অখণ্ডতা গড়ে তুলে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটানো যেতে পারে । আজ স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ভারত রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গসহ অসম-ত্রিপুরা- বিহার- ঝাড়খণ্ড-উড়িস্যার মধ্য অবগুণ্ঠিত বাঙলা ও বাঙলির ভাষা-সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এক স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা ভাবা যেতেই পারে ! কেননা , একই ভৌম- পৃথিবীতে বিভিন্ন ভৌম-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আছে । এই ভৌম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে পৃথিবীর কোথাও উষর মরুভূমি, কোথাও ধুসর প্রান্তর । কোথাও বরফের পাহাড় , কোথাও বিশাল জলরাশির সমুদ্র-হ্রদ । কোথাও সবুজ বনানী । আর এত বিচিত্র প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতিটি আলাদা আলাদা ভৌম অঞ্চল এক এক দিক থেকে সমৃদ্ধ ! প্রতিটি ভৌম অঞ্চলই তার নিজস্ব সম্পদ ও সম্ভবনায় ভরপুর । প্রাকৃতিক এই বৈচিত্র্যতাকে মান্য দিয়ে ভৌম-অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাটাই আজকের একুশ শতকের দাবী । এখানে অতীতের দেশ ভাগ , রাষ্ট্র ভাগ কোনো বাধা হবার কথা নয় ; কিন্তু বাধা হয়েছে আমাদের মানসিকতা, আমাদের ভ্রান্ত রাষ্ট্রনীতি ! এর থেকে পৃথিবীকে মুক্ত হতেই হবে !

পৃথিবী অন্যান্য ভৌম অঞ্চল কবে কিভাবে সে লক্ষ্যে এগোবে আমি জানি না । তবে ঢাকার লেবেলস্রমের দাবী আর ভারত রাষ্ট্রের পণ্য সাম্রাজ্যবাদ দেখে আমার মনে হয়েছে , ওপার বাংলাদেশের জনসংখ্যার চাপ আর এপার ভারত-বাঙলার অর্থনৈতিক চাপ সেই সম্ভবনাকে ত্বরান্বিত করছে !


দ্বীপ সরকার ( বাংলাদেশ )

আমার দেরিদের ডাক নাম অপেক্ষা



আমি আদতে এমনই-সব কিছুতে দেরি হয়ে যায়
যদি বলি এই আসছি‘তবুও এক ঘন্টা’
যদি বলি প্যান্টের ভাঁজ সারতে যতক্ষণ
তবুও আধা ঘন্টা-

অনেকেই চলে যায়-আর ফেরেনা

এই সব মানুষকে এড়িয়ে চলাই ভালো
বরং ভুলে ভালে এক্কেবারে ভুলে যাওয়া আরো ভালো

আমার দেরিদের ডাক নাম অপেক্ষা
অপেক্ষা সেতো ভীষণ যন্ত্রণার কথা

দেরি মানেই অপেক্ষা
আর অপেক্ষা পিছুটানের ইঙ্গিত
তোমার সে রকম পিছুটান নেই-

শাহিন চাষী ( বাংলাদেশ )

দেখা


ঘাসফড়িংয়ের বিয়ে;
প্রজাপতি ঝিঝি'র সাথে নিয়ে
চললো উড়ে সবুজ মাঠের পানে।
পথেই তাদের ডাকি
বললো ফিঙে আর সে শালিক পাখি,
অমন সুখে চলেছ কোনখানে!

শুধায় ঝি ঝি হেসে--
আহলাদে খুশির বাণে ভেসে,
ঘাসফড়িংয়ের আজ যে বিয়ে হবে!
বলে শালিক শুনে,
এমন মধুর রঙিন আয়োজনে 
চলো ফিঙে, আমরাও যাই তবে।

সকলে একদলে,
নেচে-গেয়ে বিপুল কোলাহলে
দেখলো সুখে ঘাসফড়িংয়ের বিয়ে।
একটু সময় পরে,
শালিক খেল ফড়িং, ঝিঁ-ঝিঁ ধরে
ফিঙেটাকে সঙ্গে করে নিয়ে!

দেখলো আকাশ তাহা,
মুখে তবু ঝরলো না স্বর 'আহা!'--
করলো না সে কোনই প্রতিবাদ!
আমার হলো দেখা,
এই সমাজের ছবির চিত্ররেখা--
জমলো মনে কেবল অবসাদ!

সম্পা সাহা (বাংলাদেশ)

প্রতীক্ষার প্রহর


সবাই যখন ঘুমের ঘোরে
আমি তখন একলা জাগে,
সবাই যখন স্বপ্ন দেখে
আমি তখন কবিতা লিখি।।

সবার মাথার কাছে যখন
ঘুমের দেবি বসে থাকে
আমি তখন তোমার কথা
ভেবে ভেবে ডুকরে কাঁদি।।

সবাই যখন যায় গো চলে
ঘুমের ওই ছোট্ট পুরীয়
আমি তখন সযতনে 
তোমার স্মৃতি আগলে রাখি,
আমার মনের ছোট্ট পুরীয়।।

সবার নয়ন যখন ওগো
আপনি মনে মুদিয়ে আসে
আমি তখন তোমার আসার 
আনমনেতে প্রহর গুনি।
শান্ত এই পৃথিবীতে 
আমি তখন নিদ্রা জাগি।।

তোমার আসার প্রতীক্ষাতে
রাতের ওই প্রহর গুনি।।

সৌগত রাণা কবিয়াল

কথার কথা


কিছু কথা নেবে..?
না..না.. দাম দিয়ে নয়..
এমনি দেবো... 
ভালোবাসা অথবা ছুঁয়ে দেখা...
উপহার কিংবা বন্ধুত্ব....!

অনেক অনেক কথা বলার আছে..
ভালো কথা, মন্দ কথা..
দুষ্টু কথা..মিষ্টি কথা..
কতো রঙের কথা..
বেরঙের কথা...!

আজকাল এ শহরে কথা দেয়ার মানুষগুলো 
কেমন যেন পিঁপড়ের মতন...
ভরসা করে নিজের 'কথা' রাখার মতো সেই মানুষ কই..?

জানোতো, 
বিগত বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলে গেছে..
বদলে গেছে মানুষের চোখের রঙ, 
শরীরের গঠন...ঘামের গন্ধ.. 
সুর-তাল-ছন্দ..কথাদের জীবন........
অথচ.. অথচ..কি বিরক্তিকর...
আমার, আমার কথাগুলো... 
সেই একই যায়গায়..একই রকম...
কেমন যেন শান্ত.. স্থির..অহেতুক...
অপলক..রোদে পোড়া..তেল চিটচিটে..
পুরোনো স্যাঁতসেঁতে জল মাখা...
নেবে...?
আমার জলে ভেজা কথাগুলো....
নেবে তুমি...??

বিশ্বাস করো তোমার উপর কোন অগোছালো দাবি চাপিয়ে..
আমি মোটেও এর দাম চাইবো না...
শুধু কিছু কথা বলার ছিলো আমার..
পুরোনো স্যাঁতসেঁতে কিছু 'কথার কথা'...
নেবে...?

তুমি নেবে আমার কথা..?
কিছু টক-ঝাল-মিষ্টি কথা..
কিছু রঙ্গ রসিকতা...
কিছু দেখার কথা..
কিছু না দেখার কথা..
কিছু পাওয়ার কথা..
কিছু না পাওয়ার কথা..
আর কিছু নিজস্বীতে বলা
অনেক অনেক 'কথার কথা'...?
নেবে..? নেবে তো...?