আত্মোপলব্ধি
সাহিত্য মানব মস্তিষ্কে সৌন্দর্য, সুকুমার ও মহাত্ম্যপূর্ণ চৈতন্যের চাষ করে। পঙ্কিল মৎসর মানস এই অঙনে শ্রীহীন। এখানে কলমের ডগায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ঘটে যাওয়া, ঘটমান বা অনাগত ভবিতব্য বিষয়াদি দ্বিধাহীন প্রকাশ করার ব্যাপার সম্পৃক্ত থাকে। শক্তিমান কলমের ক্ষুরধার আঘাতে ইস্পাতকঠিন বিপ্রতীপ পাহাড় প্রকীর্ণ-বিদীর্ণ হয়। দুর্বল হাত প্রকম্পিত হয় অন্তর্ভেদী দর্পনের সামনে। সম্মুখ আলাপচারিতায় বিভক্তিরেখা প্রকট হয়ে দেখা দেয় প্রাজ্ঞ ও অপ্রতুল মননের মানুষের মাঝে।
সাহিত্যে আত্মতুষ্টি মারাত্মক এক ব্যাধি। বাংলার মানুষ আবেগের ঘোড়া দাবড়ায়, বিবেককে নিক্ষেপ করে নিশুতি আস্তাকুঁড়ে। অবচেতন মননে উচ্চাকাঙ্খী কিন্তু অশুচি স্বপ্নীল প্রাসাদ নির্মাণ করে যায়। পলাশী থেকে একাত্তর পর্যন্ত হযবরল সংগ্রামের ইতিহাসও দ্বিধাহীন চিত্তে তাই স্বীকার করে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। হঠাৎ আত্মসম্মান বাঁচানোর প্রয়াসে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে পরক্ষণে আত্মবিক্রয়ের মিছিলে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। মূলস্রোতের সাথে সঙ্গতি রেখে আমাদের সাহিত্যকর্মীরা স্রোতের অনুকূলে নিজেদের কলমকে ভাসিয়ে দেয়। চলমান স্রোত অন্যায়-অসত্যের পক্ষে হলেও প্রতিকূলে চলার সৎ সাহস আমাদের নেই। তোষামুদে চেতনায় আঘাতপ্রাপ্ত হলেই একশ্রেণীর সাহিত্যকর্মী বলে বসেন, এটি রাজনীতির অঙন নয়। অথচ একজন প্রকৃত সাহিত্যকর্মী চলমান অন্যায়-অসঙ্গতির বিপক্ষে বলবেন, এটি খুবই স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত বিষয়। সাহিত্য রাজনৈতিক হাতিয়ার না হলেও রাজনীতি সচেতন। কিন্তু, আমাদের আত্মোপলব্ধির তথৈবচ সময় নেই। আমরা সাহিত্যমান নির্ণয়ে সচেষ্ট না হয়ে সাহিত্যকর্মীর লেখার বিষয়বস্তু এবং ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই। একটি ট্যাগ লাগানো গেলেই হলো ; তাঁর আর কোন মর্যাদা নাই, নাই কোন ভবিষ্যৎ!