Sunday, August 21

ছবি তুুলোনা

অভিজিৎ দাস

ছবি তুলোনা, কারন
ছবিতে কিছুই রাখা যায়না ধরে । এই তুমি, তুমি শুধু এখনই আছো, ছিলেওনা,থাকবেওনা ।
তুমি ক্ষণস্থায়ী, ক্ষণ, কতক্ষণ?
--- সেকেন্ড, মিলিসেকেন্ড, কিংবা তার থেকেও কম ।

ছবি তুলোনা, কারন ট্রানজিষ্টারের খাঁজে খাঁজে জমে থাকা ছবি খোঁচা দেবে, ব্যথা দেবে, ব্যথা শুধু স্মৃতি নয় ।

Monday, August 15

স্বাধীনতা

সুরজিৎ সী

স্বাধীনতা কি খাবার জিনিস, ভুরিভোজ করে খাওয়া যায়।
নাকি সেটা কোনো বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে মজা পাওয়া যায়।
স্বাধীনতা কোনো গাছে ফোটা ফুল, টুক করে তুলে নিলে হয়।
নাকি সেটা কোনো বিষাক্ত সাপ, হাত দিতে গেলে লাগে ভয়।
স্বাধীনতা কোনো রেশমি পোষাক, সারাদিন পরে থাকা যায়।
নাকি সেটা কোনো শুঁয়োপোকা যা গায়ে লাগলেই চুলকায়।

স্বাধীন হয়েছে ভারতবর্ষ তিন কুড়ি সাল হল।
তবু পরাধীন ভারতবাসী পরাধীন'ই থেকে গেল।
কত না যুদ্ধ কত মারামারি কত প্রাণ হল নষ্ট।
ক্ষুদিরাম আর নেতাজি সুভাষ বৃথাই করেছে কষ্ট।
পিতা পরাধীন পুত্রের কাছে, সেও পরাধীন আরো কারে কাছে।
প্রকৃত অর্থে ভারতবাসী, পরাধীন ছিল পরাধীন আছে।
"স্বাধীনতা" শুধু শুনেই এসেছি, দু'চোখে দেখিনি কভু।
জীবনে কাউকে স্বাধীন দেখিনি, দেশটা স্বাধীন তবু।

প্রেমের আগুন

দুজন প্রেমির প্রেমের উষ্ণতায় আচমকা দুটি গ্রামে জ্বলে ওঠল আগুন!
কিছু জন সে আগুনকে উনুন বানিয়ে ভাতের হাঁড়ি চাপাল!
কিছু জন মনের সুখে আগুন পোয়ালো!
নেতারা এল উন্নয়ন যজ্ঞের প্রস্তুরি করতে!
পুরোহিতগণ এল সেই আগুন ঘী ঢালতে!
শুরু হল উন্নয়নের মহা যজ্ঞ!
কিছুজন এসেছিল জলের কলস নিয়ে,
কিন্তু তারা তো অসামাজিক, অধার্মিক,-
নাহলে যজ্ঞ স্থলে জলের কলস কেউ আনে!
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাদের গলায় সেই কলস বেঁধে,
নদীতে ফেলে দেওয়া হল!
এখনও সেখানে আগুন স্ফটিকের মতো উজ্জ্বল!
না না,- সে আগুনে দেয়নি কেউ একটি ফোঁটা ও জল!
বরং শুদ্ধ দেশি ঘী আহুতি করা হয়েছে!
আহুতি গেছে বাবুদের নীতিজ্ঞান ও নিদর্শনের স্তুপ।
যজ্ঞ ফসলের অদম্য চেষ্টায় নিবিষ্ট পুরোহিত।
আহুতি আহত হয় নিষ্পাপ প্রাণ।

Saturday, August 13

সম্পূর্ণ

সুনীরা দাস

আজ থেকে কলেজ শুরু আমার।নতুনজীবন শুরু।মন ভীষন খারাপ,সকলেইঅচেনা।পুরোনো বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে গেছি।কি যে হবে নতুনফ্রেন্ড পাব কি না,পেলেও কেমন হবে কে জানে।এত টেনশনে নিজের নাম বলতে ভুলে গেছি,আমি গোধূলি।কেমিস্ট্রি নিয়ে ভর্তি হয়েছি। সকাল থেকে মায়ের হাজারো উপদেশ দেওয়া শুরু হয়েছে,মন দিয়ে পড়বি,প্রফেসারদের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলবি ইত্যাদি।ঠাকুর ও মাকে প্রণাম করে কলেজ যাচ্ছি এখন,অটোও পাচ্ছিনা ধূর,দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্রথমদিন দেরী করতে চাইনা তাই হাঁটছি।ঘেমে নেয়ে ডিপার্টমেন্টে এলাম,একি!আমরা মাত্র ৫জন,২জন মেয়ে ৩জন ছেলে।মেয়েটি কেমন হাঁদু পড়াকু গোছের।জিজ্ঞেস করলাম, "কি নাম তোমার?" মেয়েটি ইতস্ততভাবে তাকিয়ে বলে, "আমি সুপ্রীতি"কেমন মার্কস ছিলো কেমিস্ট্রিতে"?সুপ্রীতি বললো ৮৮, আমি মনে মনে ভাবলাম আমার থেকে ৩ বেশি। বলতে বলতেই প্রফেসার এসে গেলেন, সবার ইন্ট্রো নিলেন। তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল প্রথমদিন বলে।
টানা ১৫দিন কলেজ করেছি,ক'দিন যাইনি,৩দিন পর কলেজে এসেছি আজ। সুপ্রীতি বললো,
-"কি রে এলিনা কেন কদিন?"
-"এমনি রে,টিউশান নিবি না?"
-"প্রফেসার ব্যানার্জীকে নিয়েছি,একদিন পড়তেও গিয়েছি।"
"ওহো আমাকে তাহলে আজই দেখা করতে হবে একবার প্রফেসারের সঙ্গে।তুই যাবি সুপ্রীতি আমার সাথে?"
-"হ্যাঁ যাবোরে গোধূলি তুই আমার বাড়ি চলে আসিস।"
সুপ্রীতির বাড়ি পূর্বায়ন ক্লাবের কাছেই।বিকেলে চলে যাবো। বাড়ি ফিরতেই মায়ের পাঁচালি শুরু হয়ে গেলো,একটু রেস্ট করে সুপ্রীতির বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম, বেলের পর বেল বাজিয়ে যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছে না,বেশ কিছুক্ষন পর সুপ্রীতি দরজা খুলে নিয়ে গেলো ওর রুমে, বেশ সাজানো গোছানো।
-"গোধূলি আজ বাড়ি নেই প্রফেসার, কাল বরং কলেজে কথা বলে নিস।"
-"আচ্ছা। তোর মা বাবা কই রে প্রীতি?"
গলা ভারী করে বললো, "কয়েকমাস আগে আমি মামাবাড়ি গিয়েছিলাম মামাতো বুনুর সাথে। মা, বাবা দাদা আমকে আনতে যাচ্ছিল,উল্টোদিক থেকে এক ব্রেকফেল করা লরি এসে ধাক্কা দেয় মা বাবা ও ড্রাইভারদাকে। সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়,দাদাও গুরুতর জখম হয়েছিল।পাশের হসপিটাল এ নিয়ে যায় ওইখানের স্থানীয়রা,আমি আর দাদা আছি শুধু" বলেই কেঁদে ফেলে সুপ্রীতি।
জিন্স পরিহিত বছর ২১/২২ এর একটি সুদৃশ্য যুবক প্রীতিকে বুনু বলে ডেকে উঠলো,টিকালো নাক, ভরাট ললাট,নীলাভ দুটি চোখ,ফর্সা রঙ,লাল টিশার্ট ফুটে উঠেছে,এইতাহলে প্রীতির দাদা। সেদিন আর কিছু কথা হয়নি, বাড়ি চলে এলাম। বার বার প্রীতির দাদার মুখটি চোখের সামনে আসছে। কি করে, কি নাম কিছুইতো জানা হলোনা। নাঃ, ঘুমিয়ে যাই। কাল আবার কলেজ যেতে হবে।
সকালে উঠে নাকে মুখে গুঁজে কলেজ গেলাম। একের পর এক ক্লাস হয়ে যাচ্ছে,আজ মন বসছেনা কিছুতে,শুধু চোখদুটি মনে পরছে বার বার।বাড়িতেও মন বসছেনা,কিসের তাড়া আমার এতো! রাতে ভালো করে ঘুমাতেও পারলাম না।
সকালে প্রীতির বাড়ি এলাম।
-"সুপ্রীতি নেই বাইরে গেছে", বললো সে। তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "নাম কি তোমার?"
আমি মুখ নিচু করে বললাম, গোধূলি,কি নাম আপনার?"
-"সুপ্রভাত"
প্রীতি কিছুক্ষণ পর আসতেই বললাম, "কি রে তুই? মা নেই তাই তোর সাথে থাকবো আজ সারাদিন বলেছিলাম মনে নেই তোর?"
-"হ্যাঁ মনে পরেছে। খেয়াল ছিল না। চল চল আমার রুমে চল"। কথা বলেই যাচ্ছে প্রীতি, আর সুপ্রভাতে মন আটকে গেছে আমার। অদ্ভুত সব ভাবনা উঁকি ঝুকি দিচ্ছে।প্রীতির ধাক্কাতে ঘোর কাটল,
-"চল খেতে চল।"
খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে এসেই প্রীতি ঘুমিয়ে পরল, যদিও ও আমায় কথা দিয়েছিল ঘুমাবে না। অন্য সময় হলে রাগ হতো নিশ্চিত কিন্তু আজ একটুও রাগ হলো না। নিঃশব্দে সুপ্রভাতের রুমের দিকে পা বাড়ালাম, পর্দার পাশ দিয়ে দেখলাম ল্যাপটপ নিয়ে বসে কি যেন করছে, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি জানিনা। প্রীতির হাসির শব্দে আমি ঘুরে তাকালাম আর সেই সঙ্গে প্রীতির হাসির শব্দে সুপ্রভাত ঘর ছেড়ে বাইরে এলো আর বলে উঠল, "হাসছিস কেন তুই!" প্রীতি বললো, "লুকিয়ে লুকিয়ে গোধূলিরানী তোকে দেখছিল।"
কিছু না ভেবে ছুটে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম,কোন ভাবনা এলোনা আর পালিয়ে যাওয়াই একমাত্র সমাধান মনে হল।এসে থেকে শুধু কেঁদে যাচ্ছি,কি জন্য কাঁদছি জানিনা,শুধু মনে হচ্ছে কি ভাবছে ও আমার সম্পর্কে?বাজে অভদ্র মনে করছে আমাকে হয়তো,খেতেও ইচ্ছে করলোনা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে উঠে কেমন যেন লাগছে,লজ্জা নাকি ভয়?কলেজ যেতেও ইচ্ছে করছেনা।তবুও মায়ের জোরে কলেজ যেতে হচ্ছে।আজ প্রীতি আসেনি,যাক বেঁচে গেলাম।বাড়ি ফিরে চুপ করে বসে আছি,হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো,কে এল এই সময়?প্রীতি এসেছে।
-"গোধূলি তুই কি রে! তোর ফোন আমাদের বাড়ি রেখে এসেছিলি আর সেটা বোধ হয় খেয়ালও হয়নি? এই নে,আর আজ চলিরে পড়তে যেতে হবে।" আমি হাত বারিয়ে ফোনটি নিলাম।যে ফোনকে আমি চোখে হারাতাম সেই ফোন ছেড়ে এসেছি তা বুঝতেও পারিনি,কি হচ্ছে আমার সাথে,ফোন হাতে নিলাম,কভারের ভেতরে সাদা কাগজ মতো কি? চিঠি কে দিলো আমায়! চিঠিতে লেখা-
"কাল কলেজ শেষে নদীর পাশে এসো একবার,অপেক্ষা করবো। -সুপ্রভাত।"
সারাদিন কলেজে বসে ভেবে যাচ্ছি যাবো কি না,ঘন্টার শব্দে ঘোর কাটল,আনমনাভাবে হেঁটে চলি। কখন এসে গেছি বুঝতেও পারিনি।ফাঁকা নদীর পাড়,হন্তদন্ত ভাবে সুপ্রভাত ছুটে এসে বলল, "দেরী করে ফেলেছি অনেক তাই না? কিছু কথা আছে তাই এইভাবে ডাকতে হল তোমায়।"
আমি একদৃষ্টে চেয়ে আছি। ও বলতে শুরু করল,
-"আমি পার্টির সাথে যুক্ত,বাঙলা নিয়ে কোনমতে B.A পাশ করেছি,চাকরী খুঁজছি এখন,পাব কি না জানিনা,জেলেও গিয়েছি একবার তাই মুশকিল হচ্ছে চাকরীতে। নাম্বারটি দেবে তোমার?" এইসব শোনার পর কি বলি বুঝতে পারছিনা,নাম্বার দিয়ে বাড়ি এলাম,ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,রাত হয়েছে অনেক। ১২টা বাজে,ফোনে ম্যাসেজ এল যে কার এত রাতে,সুপ্রভাত গুড নাইট ম্যাসেজ করেছে,আমি reply করে শুয়ে পড়লাম।
আজ সুপ্রভাতের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি,ও আজ কি বলবে ভেবে ভেবে সারা রাস্তা কাটালাম,আজ ও আগে থেকেই অপেক্ষা করছে,এগিয়ে এসে বলল,
-"কিছু ভেবেছ?" এইভাবে বলবে ভবিনি,উত্তর কি দেবো বুঝতে পারছিনা,
-"কি হল কিছুতো বল গোধূলি?"
-"চাকরী পেলে তুমি?"
দেখছি পাইনি এখনও, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে চলে এলাম,এতো সাহস নেই আমার যে নিজের মনের কথা বলব,কয়দিন কেটে গেল সুপ্রভাত কোনরকম কথা বলেনি আমার সাথে,প্রীতিও বেশ কয়দিন কলেজে আসেনি,অনেক ভেবে প্রীতির বাড়ি গেলাম,আমাকে দেখেই প্রীতি জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করল। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে তোর? প্রীতি বলতে শুরু করল, "দাদার কয়দিন আগে জ্বর হয়েছিল ব্লাড টেস্ট করে জানা গেল দাদা HIV POSITIVE"। বলেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করলো।ছি! এইরকম নোংরা ছেলেকে ভালবাসি আমি, নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলাম,সুপ্রভাত
ের ঘরে গেলাম,সবকিছুর সঙ্গে নিজের আসল নোংরাগুলিকে ভালই ঢেকে রেখেছিলে বেশ,তোমার মুখ দেখতেও চাইনা আর কোনদিন,এই কথাগুলি বলে কোন কথা না শুনে বাড়ি চলে এলাম।রাস্তায় কান্না অনেক কষ্টে আটকে রেখেছিলাম,যা আর বাঁধ মানলনা,মাও নেই আজ,কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে দেখলাম চোখ ফুলে আছে। কিন্তু প্র্যাক্টিক্যাল আছে তাইএকপ্রকার বাধ্য হয়ে কলেজ গেলাম। আজও প্রীতি আসেনি। ক্লাস শেষে বেরিয়ে দেখি দূরে প্রীতি দাঁড়িয়ে।আমাকে দেখে এগিয়ে এল,একসাথে হাঁটছি, হঠাৎ ও বললো,
-"গোধূলি, দাদা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে,লিখে গেছে আমার সুন্দর ভবিষ্যতের অন্তরায় হতে চায়না ,তোকে এই চিঠিটি দিতে বলেছে। এই নে।" চিঠিটি হাতে ধরিয়ে প্রীতি চলে গেলো।বাড়ি এসে চিঠি খুলে পড়তে শুরু করলাম।
গোধূলি,
নদীর দুটি পাড়ে দেখা কখনও হয়না
নদীর বেগ কোন বাঁধা সয়না
গোধূলি আর সুপ্রভাতে অনেক অন্তর
তবুও তোমায় ভালোবাসি নিরন্তর
জানিনা কি ভাবে এই রোগ বাসা বেধেঁছে আমার শরীরে,শেষ কথা জানিয়ে গন্তব্যহীন যাত্রা শুরু করলাম।
ইতি
সুপ্রভাত
চিঠিটা শেষ করে মনে হলো আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। আমিও কি শুরু করেছি কোনো গন্তব্যহীন যাত্রা! বুকের ভেতর কি শুরু হলো বলতে পারবো না, শুধু মন আমার অস্ফুটে বলে উঠলো, "ভালোবাসি তোমায় সুপ্রভাত। তুমি ফিরে এসো, একটি ভুলের ক্ষমা কি পাবোনা আমি?"



Tuesday, August 9

মেঘলা আকাশ

সানু দাস

আজ রবিবার ,ছুটির দিন ।কাজে যাবার তাড়া নেই ।তাই জানালার ধারে চেয়ারে বসে
বাম পায়ের ওপর ডান পা টা তুলে দিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকাতে চোখ বোলাচ্ছে
আকাশ ।বাইরে তুমুল বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ছে শ্রাবনের আকাশে জমে থাকা অভিমানী
মেঘগুলো ।
একে ছুটির দিন তার ওপর আবার বৃষ্টি ; তাই বোধহয় আকাশের শরীরে কেমন একটা
অলসতা ভাব লক্ষ্য করছে আকাশ নিজেই ।
মাত্র ৩০ বছর বয়স আকাশের ।স্কুল মাস্টারীর চাকরী করে ।তার বাবা আর মা
দুজনেই গত হয়েছেন ।স্ত্রী অতসী আর ২ বছরের ছেলে আয়ুশ কে নিয়ে দিব্যি কাটে
তাদের দিন গুলো ।ছোট সংসার ,সুখী সংসার ।
স্ত্রী আর ছেলেকে আকাশ গত পরশুদিন গিয়ে শশুর বাড়িতে রেখে এসেছে ।আজ এই
বৃষ্টির দিনে ওরা দুজন থাকলে বেশ ভালই হতো ।মাছ ভাজা আর বেগুন ভাজা দিয়ে
খিচুড়ি খাওয়া যেত তিনজন মিলে ।কিন্তু কী আর করা যাবে ! আকাশ আবার ভালমতো
রান্নাটা ও করতে পারে না ।তাই আজকে ও তাকে হোটেল থেকেই খাবার কিনে খেতে
হবে ।এই সব কথা চিন্তা করছে আকাশ ,হঠাত এমন সময় দেওয়ালে টাঙানো ঘড়িটা ঢং
ঢং করে ১১টা বাজার জানান দিলো ।জানালার দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখল যে বৃষ্টির
গতিবেগ আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে ।তাই আর দেরী করা ঠিক হবে না ভেবে আকাশ
একটা ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল বাজারে যাবার উদ্দেশ্যে ।
বাজারটা অবশ্য বেশী দূরে নয় ,আকাশের বাড়ি থেকে পূর্ব দিকে ১০ মিনিটের হাঁটাপথ ।
বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে বাজারের তিন নম্বর দোকান 'শ্রী হরি হোটেল' ।ওই
হোটেলটা থেকেই আকাশ বেশীর ভাগ সময় খাবার কেনে ।আজকে আকাশ ১ প্যাকেট
বিরিয়ানী এবং কিছু পরিমান শশা আর টমাটো বাজারের অন্য দোকান থেকে কিনে এসে
দাঁড়ালো বাস স্ট্যান্ডের পাশে একটি দোকানে সিগারেট কিনবে বলে ।
হঠাত আকাশের চোখ পড়লো হলুদ রং এর চুড়িদার পড়া একটি সুন্দরী মেয়ের দিকে
।মেয়েটার চোখের নীচে পড়া কালির দাগটা আকাশের খুব চেনা চেনা মনে হল
।মেয়েটাকে চিনতে একটু ও অসুবিধা হল না আকাশের ।মেয়েটার নাম মেঘলা রায়
।কলেজে তারা দুজনে একসাথে পড়তো ।একসময় খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল আকাশ আর
মেঘলার মধ্যে ।
এমনকি একসময় তাদের প্রেমটা শরীর পর্যন্ত গড়িয়েছিল ।তার সবচেয়ে বড় প্রমান
মেঘলার বুকের বামদিকের স্তনের ওপরের তিলটার কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে
আকাশের ।
আকাশ লক্ষ্য করল মেঘলার করুন জলেভরা চোখ দুটো অজস্র প্রশ্ন  নিয়ে তার
দিকেই তাকিয়ে আছে ।মেঘলা আজ ও বিয়ে করেনি ।"যদি দং হৃদয়ং মম ,তদি দং
হৃদয়ং তব " মন্ত্রটা দুজনা মিলে একদিন একসাথে উচ্চারন করলে ও ,আজ তার
কোনো দাম নেই ।
এইসব কথা মনে পড়তেই আকাশের বুকের ভিতরটা কেমন জানি খচখচ করে উঠল ।আকাশের
আর সিগারেট কেনা হলনা ,সে দ্রুত পায়ে বাড়ির পথে রওনা দিল ।এদিকে বৃষ্টি ও
জোরে শুরু হয়েছে ।আকাশ আর পিছনে ফিরে দেখেনি ,যে বৃষ্টির জল আর মেঘলার
চোখের জল কোথা ও মিলে মিসে এক হয়ে গেছে কি না .....

             -: সমাপ্ত :-
খবর

(গল্পের শুরুতেই জানিয়ে রাখি ,রাজর্ষি গাঙ্গুলী বলে চরিত্রটি সম্পূর্ন
কাল্পনিকচ চরিত্র ।বাস্তবের সাথে কোনোরকম সম্পর্ক নেই ।)

আজ শনিবার ।অফিসের ছুটি ।তাই বিগবাজারে এসেছি কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস
মার্কেটিং করব বলে ।মার্কেটিং সেরে কার পার্কিং জোনে নিজের গাড়িটার লক
খুলে ,কেনাকাটি করা জিনিস গুলো গাড়িতে রাখছি ।হঠাত এমন সময় পিছন থেকে
একটা হাত আমার কাঁধে এসে থামল ।পিছনে ফিরে দেখলাম হাতটা আর কারো নয়
,রাজর্ষি গাঙ্গুলীর ।রাজর্ষি আমার কলেজের সহপাঠী ।কলেজ ছাড়ার পর আর
আমাদের দেখা হয়নি ।দীর্ঘ আট বছর পর আজ আবার দেখা হল আমাদের ।সত্যি কথা
বলতে ওকে দেখে আমি খুব খুশিই হলাম ।আমি ওকে কফি খাওয়ার প্রস্তাব দিলাম ।ও
আপত্তি করল না ।আমি রাজর্ষির সাথে রাস্তার পাশের কফি হাউসে প্রবেশ করলাম
।বেয়ারাকে ডেকে দুজনার জন্য দুটো কোল্ড কফির অর্ডার দিলাম ।তারপর আমরা
শুরু করলাম পুরানো দিনের স্মৃতিচারন ।আমি কলেজ পাস করার পর প্রফেসান
হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জব ।আর রাজর্ষি বেছে
নিয়েছিল সাংবাদিকতার কাজ ।স্থানীয় একটি নামকরা দৈনিক সংবাদ পত্রের একজন
নামী সাংবাদিক রাজর্ষি ।

 বেয়ারা এসে কফি দিয়ে গেল ।কফিতে চুমুক দিয়ে আমি বললাম --"তারপর এখন কী
রকম চলছে তোর ?"রাজর্ষি বলল যে সে এখন ছুটিতে আছে ।অফিসের বসকে ছুটির
কথাটা বলতেই বস রাজি হয়ে গেল ।বসের রাজি হবার অবশ্য একটা কারন আছে
।দিনকয়েক আগে রাজর্ষি ফ্রান্সে গিয়েছিল ।ইউরোকাপের টাটকা খবর সংগ্রহ করবে
বলে ।কাজের সূত্রে রাজর্ষিকে সারা বছর দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতে হয় ।জাপান
,ব্রাজিল ,দুবাই ,ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি জায়গায় তাকে যেতে হয়েছে কাজের
সূত্রে ।সম্প্রতি রাজর্ষি গিয়েছিল ফ্রান্সে ।সেখানে ফুটবলের সাথে আরো
একটা খবর জোগাড় করে রাজর্ষি ।ফ্রান্সে ইউরোকাপ শেষ হবার দিন কয়েক পর যে
ট্রাক দুর্ঘটনাটা ঘটল ,সেটার কিছু টাটকা ছবি তোলে রাজর্ষি ।হ্যাঁ আপনারা
ঠিকই ধরেছেন ,যে ট্রাকটা ৮৪ জনকে একসাথে পিষে মেরেছে ফ্রান্সের রাস্তায়
।আমি এখানে সেই ঘটনার কথাই বলছি ।সেই দুর্ঘটনার যে ছবি রাজর্ষি তুলেছিল
।সে সব ছবি এবং তথ্যর জন্যই নাকি রাজর্ষিদের সংবাদ পত্রের বিক্রির পরিমান
কয়েক গুন বেড়ে গেছে ।আর ঠিক এই কারনেই রাজর্ষির দিন কয়েকের ছুটি মঞ্জুর
করেছে ওর অফিসের বস ।

 আমি রাজর্ষিকে শুভেচ্ছা জানালাম ওর এই কাজের জন্য ।কিন্তু এরপর রাজর্ষি
আমাকে যে কথাটা বলল ,আমি তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ।রাজর্ষি
আমাকে বলল যে ও সামনের সপ্তাহে বাংলাদেশে যাবে ।ওখানে নাকি একটা
রেস্তরাতে জঙ্গিরা আক্রমন করবে ।আমি অবাক হয়ে ওকে বললাম --"তুই জানলি কী
করে ?"রাজর্ষি চুপিচুপি চারদিকটা একবার ভাল করে দেখে নিয়ে ,তার মুখটা
আমার কানের কাছে নিয়ে এসে অত্যন্ত নীচু গলায় আমাকে বলল--"দেখ তুই আমার
অনেক পুরানো এবং বিশ্বস্ত বন্ধু ।তাই কথাটা শুধু তোকে বলছি ।আমরা এমন
কয়েকজন সাংবাদিক আছি ,যাদের নেটওয়ার্ক জঙ্গিদের সাথে যুক্ত আছে ।জঙ্গিরা
কখন কোথায় কী করবে ,তার খবর আমাদের কাছে অনেক আগে থাকতেই থাকে ।"সে আরো
বলল মুম্বাই এ অ্যাটাক ,পাঠানকোটে অ্যাটাক .কিংবা পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কার
ক্রিকেট টিম বাসের ওপর যে জঙ্গিরা অ্যাটাক করবে ,তার খবর আমাদের কাছে
অনেক আগে থাকতেই ছিলো ।আমি ওকে বললাম --"কিন্তু তোরা এই সব খবর অনেক আগে
থেকেই যদি জানতে পারিস ,তাহলে পুলিশ কে জানাস না কেন ? "এমন সময় ওর ফোনটা
বেজে উঠল ।ফোনে কথাটা শেষে করার পর ও আমাকে জানাল ওর বাংলাদেশের পরিবর্তে
পাকিস্তানে যেতে হবে বিশেষ খবর সংগ্রহের জন্য ।যদি ও বিশেষ খবরটার কথা ও
উল্লখ করল না ।ওদের অফিসের বস অর্ডার দিয়েছে ও যেন এক্ষুনি বেড়িয়ে পড়ে
।যাবার আগে অবশ্য রাজর্ষি আমাকে আমার প্রশ্নর উত্তরটা দিয়েগিয়েছিল ।একটা
নির্দয় হাসি হেসে রাজর্ষি আমাকে বলেছিল--"১২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে
কয়েকশো মানুষ যদি মরে যায় ,তাহলে কোনো ক্ষতি নেই ।আর তাছাড়া খবর চাইতো
পাবলিকের জন্য ।রঙচঙে রক্ত মাখানো খবর না হলে ,পাবলিক আবার ঠিকঠাক খেতে
চায় না ।"

 বাড়ি ফেরার পথে আমাকে সেদিন খুব সাবধানে গাড়ি ড্রাইভিং করতে হয়েছিল
।খালি একটাই কথা মাথার ভিতরে বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল ।রাজর্ষিরা কী করে
এতগুলো মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারে !! কয়েকদিন পর বাংলাদেশে
রেস্তরার জঙ্গি আক্রমনের খবরটা কাগজে পড়ে ,খুব খারাপ লাগছিল আমার ।কিন্তু
আমার ও তো কিছু করার ছিল না ।কারন আমার কাছে কোনো প্রমান ছিল না ।

দিন ১৫ পরে হঠাত একদিন দেখলাম কাগজে বেরিয়েছে ভারতীয় সাংবাদিক রাজর্ষি
গাঙ্গুলী পাকিস্তানে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসলামাবাদে একটি জঙ্গির
আত্মঘাতী বিষ্ফোরনে প্রান হারিয়েছেন ।খবরটা দেখলাম রাজর্ষি যে সংবাদ
পত্রে সাংবাদিকতার কাজ করত ,সেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ।খবরটা পড়ে
আমি মনে মনে ভাবলাম রক্ত মাখানো খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আজ নিজেই রক্ত
মাখানো খবর হয়ে গিয়েছে ।কারন সব খবর আগে থাকতে জানা যায় না ।পাকিস্তানের
বিষ্ফোরনের খবরটা হয়তো রাজর্ষিকে তার বস ইচ্ছা করেই তাকে জানায়নি ।কারন
বস হয়তো চেয়েছিল এবারের রক্ত মাখানো খবরের রক্তটার রং যেন আরো বেশী গাঢ়
হয় ।

Sunday, August 7

আগে ও পরে



এইতো সেদিনের কথা, মোখলেসের মনে আনাচে কানাচে উপচে পড়ত সুখ। শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধু একজনের মুখই ভেসে উঠত চোখের সামনে। তার হৃদয় রাজ্যের রানী তার অপ্সরী তার প্রাণেশ্বরী তার মনের মানুষ জরিনা খাতুন। আহা তার রূপের ঝলকে মোখলেস এমনই অন্ধ যে দুনিয়ার আর কোন প্রাচুর্য মোহ তার চোখেই লাগতনা। জরিনা খাতুনও কম যায়নি কোন অংশে। উঠতে বসতে মিস কল মেরে মেরে মোখলেসের কর্ণপোকা নাড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করত। “ওই তুমি রাইতে খাইছ”? ওই তুমি মিস কল দেখবার পাওনা? ফুন দাওনা কেন?” কি ব্যাপার ফুন এতক্ষণ ব্যস্ত কয় কেন কার লগে এত কথা কও? ” ওই হুনো একখান নয়া ফিলিম আইছে আইজ কইলাম দেহান লাগব। মোখলেসও আহ্লাদে গদ গদ হয়ে মুখে স্নো পাউডার মেখে বোগলের তলে কড়া পারফিউম মেরে চোখের সানগ্লাস কপালে তুলে ছুটে যেত জরিনা খাতুনের কাছে। জরিনা ওড়না দিয়ে প্রিয়তমর কপালের ঘাম মুছে দিয়ে বলত “আহারে মুকডা কিরাম হুগনা হুগনা লাগে। ওই তুমি খাওন দাওন করোনা কেন”। আহ কি পিরিত যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে দুজন মানব মানবী এই মাটির ধরায়।

তারা ফিল্ম দেখত, পার্কে ঘুরে ঘুরে বাদাম চিবুতে চিবুতে নতুন জীবনের গল্প করত | কে কাকে কতটা ভালবাসে তা বোঝানোই যেন তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোখলেস গার্মেন্টস এর সামান্য বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী। যা কামাই করে তাতে তার নিজেরই দিন কাটে কোন রকমে। এদিকে জরিনা বিয়ের জন্য বারবার অনুরোধ করছে। মোখলেসও জরিনাকে পাশে চায়। জরিনা অনেক রকম আশ্বাস দিল, বলল মোখলেস কে সে দেবতার মত পূজা করবে, ভালবেসে তাকে পূর্ণ করে দিবে হ্যান ত্যান আরও কত কি। এইবার যে ঘর বাঁধতেই হবে। হার মানল মোখলেস। অবস্থা এমন “ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া, করতে হবে এবার বিয়া”। যাক অবশেষে এল সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত। তারা ভালবেসে নতুন জীবন শুরু করল।

এইতো গেল বিয়ের আগের গল্প। কিন্তু পরের গল্প কি ততোটাই মধুর ছিল? প্রথম কিছুদিন ভালই চলেছে, কিন্তু এরপর থেকেই সব বদলে যেতে থাকে। ঐ যে কথায় বলেনা অভাব যখন দরজায় কড়া নাড়ে ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। শুধু যে অভাবই দায়ী তা ঠিক নয়, আসলে বহু কাঙ্খিত কোন কিছু হঠাৎ পেয়ে গেলে মানুষ সে জিনিস টির প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। জরিনার বেলায়ও তাই হল। কথায় কথায় ঝগড়া, চিৎকার চেচামিচি, জিনিসপত্র ভাংচুর, রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাওয়া বারবার, উঠতে বসতে স্বামীকে খোঁটা দেওয়া এ সবই শুরু হল। বদলে গেল জরিনা। মেজাজ যেন সপ্তম আসমানে। বেচারা মোখলেস তো তখন গৃহকর্তীর অত্যাচারে প্রাণ ত্যাগ করে এই অবস্থা। ভয়ে ভয়ে চুপসে থাকে। ভাবে বিয়ের আগে এই মেয়ে কত শান্ত ছিল আর এখন কেমন হয়ে গেল। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। ভাগ্যের লিখন তাকে যে মেনে নিতেই হবে। নিরবে চোখের জল ফেলে আর কবিতা লিখে দিন যায়।

মনে মনে ভাবে দেখা যাক কতদিন জীবন প্রদীপ টিকে থাকে প্রচণ্ড এই কালবৈশাখীর ঝাপটা এড়িয়ে,,,,,,,,,

নিচের কবিতা খানি মোখলেসের লেখা,  তাও একদিন জরিনা খাতুনের চোখে পড়ায় তাকে ছিড়ে কুচি কুচি করে ফেলা হয়েছিল |


অরুণি মায়া অনু

Saturday, August 6

এখন তোমাকে নিয়ে

নরেশ রায়

এখনো তোমাকে নিয়ে
লেখা হয় নানা কবিতা
তুমি এখনো তেমনি সবুজ
ইনকা থেকে এই শতাব্দী 
দেখে অবাক আমি ভাবছি
তোমাকে নিয়ে উড়ে যাব
অন্য কোন ভিন্ন  গ্রহে। 
চাঁদে বড় ভিড় আজকাল
চরকা নিয়ে চাঁদ বুড়ি
বেজায় নাজেহাল। 
তোমায় গোপনে আপন
করে নেব নেই কোন উপায়
অত্যাধুনিক নজরদারি 
ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়। 
পৃথিবীর এক কোণেই তাই
বসাব বাসর। গ্লোবাল ওয়ার্মিং
বারুদে মাখানো ধর্ম  নানা
দুর্যোগের মাঝে দুর্জয়  সাহসে
ক্যাকটাসে ফোটাব ফুল
তুমি থেকো পাশে
                        না করো না
চির চঞ্চলা নীলাঞ্জনা।

মৃত শ্রাবণে

সৌরভ আহমেদ সাকিব

"মনে রবে কি না রবে আমারে।
সে আমার মনে নাই ,
মনে নাই......"

হয়তো একান্তে চোখের অগ্ন্যুৎপাতে
বিরক্ত বিকেলে সঙ্গীহীন নৌকা বিহার
যখন থেমে যায়;
স্মৃতির ফড়িং উড়তে থাকে অবচেতন আকাশে....

আমি ভুলতে পারিনি এই ধূসর মৃত্তিকার গান
ছড়িয়ে পড়েছে যা তোমার নুপূরের ঢেউ এ।
আমার বেঁচে থাকার সংকল্পের রং
তোমার গ্রীবার মত কোমল।
ভাবনার শান্ত বলয়ে তুমি আমার পালতোলা নৌকা;
মেদুর ভাবনার নক্ষত্র স্পর্শ আমার অনুরাগের
ঠোঁটে মেলে দিয়েছে নীলাভ সমুদ্দুর।

আমি বাঁচতে চেয়েছি ইউলিসিসের চোখে,
অর্ফিয়াসের বীণার অনুরণনের মত ছুঁতে চেয়েছি
শ্রাবণ্যের বুক।
নিশ্চল কবিতার লাইন মুঠো ভরে তুলি নিয়ে
উড়িয়ে দিয়েছি রাতের স্বপ্ন বিলাপে;
যদি তুমি আবার আঁকড়ে নাও আমায়
মৃত নাবিকের প্রেয়সী রূপে তোমার নিঃস্বতার বালুতটে.....

শ্রবণ্যের থেকে দূরে
※※※※※※※※

এখানে মৃত্যুকথা দীর্ঘ।
গাছেদের নীরবতা শব ব্যবচ্ছেদের টেবিলের মত
শান্ত ও শীতল।
অবিশ্বাসের ধুতরো ফল খেয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে
পাগল প্রেমিক।
গায়ে তার মৃত টেলিগ্রাম....

আমার স্তুপীকৃত আহ্বান মেট্রোপলিটন শহরের
সুড়ঙ্গ পথে সহমর্মিতা খোঁজে।
কাল রাতে স্বপ্নে সার্ত্রের গালে সশব্দে চড় কষিয়ে,
সকালে মনে মনে ক্ষমা চেয়েছি।

আমার কৃষ্ণপক্ষের জীবন...
প্রত্ন হরফে লেখা দীর্ঘশ্বাসের গুহা আমার ফুসফুসে।
পুনর্মুদ্রিত কোনো ভালোবাসা বা আসক্তির
ক্রান্তদর্শী ছায়া ঘুম পাড়ায় না আমায়।
আমি শ্রাবণ্যকে হারিয়ে ফেলেছি.....

 

Wednesday, August 3

অক্ষর লিপি

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

বিহা ঘর । সিনায় আইল । আইবুড়া বিটিছিলা  । শাওনে ভাদুর গান আর পরনে কানি

বেলাউজ । ঢাইকতে লাইরছে তন ।
ফিলিম দেইখছে নুনুগুলান আর বইলছে ভাল কেনে

হলুদ পারা ট্যাসকি আর পাঘা বাঁধা সঙ । দমে গনধো মাইখে ভুঁটি বাগায়
কে টোকরি মাথায়

মার তরে কামিন আইনতে আইসেছে । বিটি বিকায় পণের টাকায় । প্যাটের 
বড়ো টান বছরকি দিনে

আঁধার পারা মেঘ । বৃষ্টির দুকানে আয়
মুক্তার পারা আশু দিব এমন সাঁঝের
বেলা আর চিরুণ কইরব চুলে...

2.
অক্ষর লিপি দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

পলক । লক । কথাও । ওরা বুঝতে পারছে না । নাম করতে করতে জমে যাচ্ছে ধ্যান

বিন্দু ঘামের । র কিছু হবার নেশায় । সায় । আশার শেষে আষাঢ় আর বীজতলা

প্রস্তুত । তবুও দ্বিধা । ধাক্কা প্রবল । বলগুলি শরীরের ভাগ্যবান খেলোয়াড়ের হাতে

প্রাণ । ণত্ব বিধান ষত্ব বিধানে নেই । ইতি টানবার আগে চিঠি দেখে অনেক না বলা

অবলা মর্জিনা ছেলে হয়ে ওঠে আব্বু আমিনার ঘরে
৩.
অক্ষর লিপি দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

রাস্তা । তাকে ভিড় দিল । দিলদার দিল না । নাকউঁচু লোকজন নাক সিঁটকে বলে উঠলো গাঁইয়া অসামাজিক

ম্যাজিক ছিল না কথায় । ঠাঁই পেতে বসে । সে কুড়িয়ে নিচ্ছিল যা তার অত্যন্ত নয়  পলিপ্যাক আর কাগজ

গজগামিনী । নীতা নামে মেয়েটি । টি বোর্ডে কাজের পর কোথায় চলে যায়
বিনয় বাদল দীনেশ জানে না

নামছে অন্ধকার । কার পাখি কবে খাঁচা  ভুলে । লেখার খাতায় তার 
পালক রেখে চলে গেছে তারায়

রায় ঘোষণা হওয়ার আগেই সে দেখলো আসলে কেউই  অপরাধী নয়