Thursday, October 13

সামিয়া ইতি

পূর্বের স্মরণে 


পূর্বা মরে গেছে আজ এগারো মাস, দৌড়ে দৌড়ে সময়টা চলে গেলো! ওর মৃত্যুতে অসীম একটু কাঁদলো না ওর বাড়ি গেল না, ওর বাবা মাকে একটু শান্তনা দিলো না, বরং অনেকটাই পালিয়ে পালিয়ে ছিল, সেটাই শুধুমাত্র করার ছিল ওর।

অসীম ছিল ওর একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ক্লাসমেট এবং আপন ভাইয়ের মত কিছু একটা সম্পর্ক; অসীম এরকমটাই ভাবতো, ভাবতো পূর্বা ওকে ভাই এর চোখে দেখে এবং ও নিজেও ওকে বোনের মতই ভাবার চেষ্টা করতো কিন্তু ভেতরে ভেতরে পূর্বাকে প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী হিসেবেই চাইতো কিন্তু ও জানে এসব একদম অসম্ভব চাওয়া তাই নিজের ইচ্ছেগুলোকে সচেতন ভাবেই গোপন করে রাখতো।

সবদিক থেকে চিন্তা করলে পূর্বা ওর বন্ধু কিংবা খুব বেশি হলে বোনের মত; এর বেশি কিছু নয়।

কিন্তু মাঝে মাঝে অসীম দুঃসাহসী হয়ে উঠতো, বই দেয়া নেয়ার সময় কিংবা হাঁটতে হাঁটতে ভুলে ধাক্কা লেগে অথবা নিতান্ত ,ওকে উঁচু কোথাও কোন রাস্তা কিংবা গাড়িতে উঠতে সাহায্য করার অজুহাতে ছুয়ে দিত ও, পূর্বা কখনো কিছু বুঝতে পারতো কিনা অসীম জানেনা কিন্তু কখনো সে এই ব্যাপারে আপত্তি দেখায়নি।

পূর্বা সুন্দরী, ক্লাসে মেধা তালিকায় প্রথম সারির, স্মার্ট মানবতাবাদী সৎ চরিত্রের এক গুনী মেয়ে, আর অসীম ঠিক যেন উল্টো, সিগারেট, নেশা, অন্যায় প্রায় সবার সাথে বাজে ব্যবহার, মিথ্যা বলা; কোন দোষটি নেই!

তারপর ও কীভাবে কীভাবে যেন ওর সাথে বন্ধুত্ত হয়ে গেলো!! তাই পূর্বার সাথে এর থেকে বেশি আশা করা বোকামি! ভালো করেই জানে অসীম।।

হঠাৎ সব ওলটপালট হয়ে গেলো একদিন, ক্লাসেই এক পলিটিকাল লিডারের ছেলের চোখ পড়ে পূর্বার উপর। ক্লাসের সবাই ভালো করেই জানে অসীম পূর্বার বেস্ট ফ্রেন্ড। কাজেই ওকেই ব্যবহার করে সেই ছেলে, খুব খারাপ উদ্দেশেই ব্যবহার করে।।

পুরো এক লাখ টাকা হাতে দিয়ে সেই ছেলেটি অসীমকে বলল “একদিন পূর্বার সাথে ডেট করিয়ে দে না ভাই, ওকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। বিশ্বাস কর ওর কোন ক্ষতি আমি করবোনা।”

টাকার প্রয়োজন কার না আছে, এমনিতেও নেশার ব্যাপারটা বাসায় জেনে যাওয়ায় হাত খরচ বন্ধ প্রায়, তাছাড়া ওকে ভালবাসে ছেলেটি, অসীমের হবেনা বলে কি পূর্বা কারো হবেনা!??

পূর্বা এবং ওর নিজের ভালো ভালো ভবিষ্যৎ দিকগুলো চিন্তা করেই রাজি হয়, তারপর একদিন সেই ছেলেটির দেয়া সময় অনুযায়ী পূর্বাকে নিষ্পাপ সত্য সাধু গলায় বলে মা ওকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে। আজই! এই এক্ষুনি।

আর সেই ছেলেটির ফ্লাটে নিয়ে গিয়ে ছেলেটির হাতে তুলে দিয়ে; পূর্বা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত চলে আসে সেখান থেকে।
পরের কয়দিন আর পূর্বার খোঁজ নেই।

তারপর একদিন পুরো ভার্সিটি স্তব্ধ।

পূর্বাকে কে বা কারা যেন হত্যা করে ফেলে দিয়েছে নর্দমায়, উদ্ধার হয়েছে ওর অর্ধ গলিত লাশ। প্রাথমিক ভাবে লাশের আলামত দেখে পুলিশ ধারণা করছে রেপ করে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে মেয়েটিকে, বডি পোষ্টমর্টেমের জন্য নিয়ে গেলো তারা।

অনেক দিন ধরেই কেসটা চলল, কারো কিছুই হলনা।

একদিন রাসেল বলল চল আমরা পূর্বার স্মৃতি ধরে রাখি একটা ওয়েব পেইজ বানাই ওকে নিয়ে, সেখানে পূর্বা আমাদের যা যা এস এম এস আর ইনবক্স করেছে সব জমা করে রাখবো।

তারপর এটা নিয়ে সবাই অনেক অনেক কাজ করলো যার যার কাছে যা যা ম্যাসেজ ছিল সব ঐ ওয়েব পেইজে সংরক্ষণ করা হল।।

কম্পিউটার খুলে অসীম আমাদের বন্ধু পূর্বা ডট কমে যায়। একের পর এক ম্যাসেজ খুলে পড়তে থাকে ও, সেখানে ওকে দেয়া ম্যাসেজগুলোও পেয়ে যায়। তারপর পূর্বার এক কাজিনকে দেয়া ম্যাসেজে এসে চোখ আটকে যায় ওর।

সেখানে লেখা, ‘আমি অসীমকে ভালোবাসিরে’, ওর চরিত্রের ভুল ত্রুটিগুলো ও আয়ত্তে নিয়ে এলেই ওকে বলবো যে আমি তোকে ভালোবাসি গাঁধা, তোর সাথে বাকী জীবনটা পার করতে চাই।

ছল ছল চোখে কম্পিউটার বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় অসীম। রান্নাঘর থেকে ধারালো বটিটা হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে,
তখন সন্ধ্যা ছয়টা,

এ সময় পূর্বার হত্যাকারীকে অনায়াসেই পাওয়া যাবে ওদের গোপন মদের আড্ডায়।

কিশলয় গুপ্ত

শীতকালীন খসড়া-২



ভুল করেও জাত বোঝাতে এসো না

যৌনাঙ্গ বুঝিয়ে দেবো,
জননেন্দ্রিয় বুঝিয়ে দেবো
যে ভাবে রোয়াকাল গোনে চাষী
যে ভাবে জলকাদা মাপে 
বুঝিয়ে দেবো।

আমাকে ধর্ম বোঝাতে এসো না

বুকের দুধের প্রতিশব্দ বুঝিয়ে দেবো
ভাতের গন্ধ লাগা খালি পেট
নাক,কান, চোখ ঘোর কুয়াশা
বুঝিয়ে দেবো।

আর কী বোঝাবে প্রেম
ব্লাউজের হুক অথবা ব্রা'র স্ট্র্যাপ
মানচিত্র মেনেছে কোন কালে!
মানতে দিয়েছে কে!

অতএব হে মানুষরুপী দুপেয়ে স্তন্যপায়ী
আমাকে জীবন বোঝাতে এসো না

সদ্যজাত'র চোখে শীতের পর্ণমোচী দেখেছি

মতিউর রহমান মিলন

ফেরা


ফিরতে চেয়েছিলাম আমার আর ফেরা হয়‌নি ঘ‌রে, 
কুপির তেল ফুরিয়ে গেছে পথ ফুরোবার আগেই 
ফেরার প্রত‌্যয় থাকলেও কিছু মানুষের ফেরা হয়না 
চিরহ‌রিৎ প্রার্থনার জ্বলজ্বলে চোখ বলেছিল,
তোমার জন্যে প্রতীক্ষার অন্ত নেই আমার! 
ক্ষ‌য়িষ্ণু জীব‌ন ভু‌লে যে প্রথম গাই‌তে শি‌খি‌য়ে‌ছিল
সেও ভুল মানুষের সাথে মিলিয়ে ফেললো গলা,
সম্পর্ক নামক সেতুটি নির্মাণ করা খুব কঠিন 
সময়ের ব্যবধানে রক্ষা করা হয়তো আরও কঠিন 
কুপি নিভতেই অন্ধক‌ার আরও গাঢ় হ‌তে থাকে
বু‌কের উপত‌্যকা জু‌ড়ে নেমে আসে আরো গাঢ় অরণ্য 
দূ‌রের আকাশে তাকিয়ে থাকি, মেঘ দেখি কারো অবয়বে! 
সুবর্ণ সময় বহুদূ‌রে, তাই আরও দূরে গেলে তুমি; 
অন‌্য আকা‌শে চাঁদ থাকলেও 
অন্যের ঘরে বাতি জ্বললেও 
নিজের কুপির তেল ফুরোলে পথের সন্ধান পাওয়া যায়না 
তাই হয়তো কিছু মানুষের আর ফেরা হয়না ঘরে।

উজ্জ্বল দত্ত'র কবিতা

মেঘগুলো ভেসে বেড়ায় আরো গাঢ় নীলে

মনের ঘরে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে
বারবার হেরে যাই,
আকাশের সমস্ত মেঘ দুচোখে
অথচ কাঁদতে পারিনা !

জীবনের সমস্ত হিসাব নিকাশ
ভালোবাসার ছোট্র একটা গল্প,
অসমাপ্ত রেখেই লিখলে আরো
নতুন একটা কবিতা !

সব পাথর হয়ে গেছে 
আগের মত নেই আর কিছু, 
গোলাপের লাল পাপড়িগুলো 
সেও বর্ণহীন ধূসর! 
স্মৃতির আলপনায়, 
মেঘগুলো ভেসে বেড়ায় 
আরো গাঢ়ো নীলে।

ভালোবাসার কষ্ট
হয়তো ভালো না বাসলে
এক জীবনে তা আবিস্কার করা
সম্ভব হতোনা!

আর কত
আর কত কষ্ট দিবে ?
সমস্ত স্বপ্ন তোমাকে উৎস্বর্গ করলাম
তবু তুমি ভালো থেকো,
তোমার মত করে তোমার ভাবনায়।!!


কোন কথা হবেনা

নিঃশব্দে কাঁটুক অন্ত প্রহর 
ক্ষোভে ফেটে পড়ুক 
নগরের অলিগলি প্রিয় রাজপথ 
যতই রক্তে লাল হউক শহর,
কোন কথা হবেনা। 

ইচ্ছে করলে তুমি 
প্রেমিকার হাতে হাত রেখে, 
ঘুরে আসতে পারো 
অনাদিকাল স্বর্গরাজ্যে 
তাতে কোন আপত্তি নেই,
তবে কোন কথা হবেনা।

শহরের হাইরিচ বিল্ডিংগুলোর মত দাঁড়িয়ে
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে,
কোন কথা হবেনা 
কোন প্রতিবাদ হবেনা, 
হবেনা কোন মিছিল এ শহরে।

পূরব ব্যানার্জী

ভালোবাসার সঞ্জীবনী
         

হটাৎ দুর্যোগে সেদিন ,অনির্দিষ্ট লেট ট্রেন  ! 
ক্লান্ত অবসন্ন দেহ ,আর বিষণ্ণ মনে, 
ভিড় হতে দূরে,অপেক্ষা প্লাটফর্মে , 
একাকী নির্জনে ---------
ছিল দৈনন্দিন একঘেয়েমির এক অব্যক্ত দংশন  !!
বাঁচার জন্য বেঁচে থাকা, 
আনচান হৃদয়ে কেবলই যত বেসুরো গান -
আবেগ সৃজন যা কিছু সবই ,
করেছিল খান খান ।।
অন্ধকারে বন্ধ চোখের পাতায়, 
তখনও ঘোর অন্ধকার  !
হটাৎ ই অতীতের ফেলে আসা স্মৃতির রোমন্থন, 
তখন পরিচয় সবে বছর দুই তিন-
আবিষ্টতায় আচ্ছন্ন মন ,
সম্মোহনী চোখে না বলা ইশারায় প্রতিক্ষণে- 
হায় পাগলসম আমি !!
থেকেছি ব্যাকুল প্রিয়া, তব দর্শনে -
নাই ক্লান্তি, নাই অবসাদ কোনো  !
স্পর্শের কাঙাল ছিলাম ,
শয়নে স্বপনে উতলা শুধুই তব স্পর্শের লাগি  !!
বিকেলের আকাশে জমে থাকা একচিলতে মেঘে,
কম্পিত অধরে শাওন পিয়াসী আহ্বান করেছিল,
তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো উদভ্রান্ত  !
যেন স্বর্গের সুষমায় মোহাচ্ছন্ন দুই প্রাণ ।।
প্রেমের সেই গান যেন ফের -
সুরে সুরে সঞ্জীবনী হয়ে শোনাল হায় ,
ভালোবাসার এক গল্প চিরন্তন !
থমকে দাঁড়ানো পড়ন্ত বিকেলে-
পরিশ্রান্ত ভগ্ন হৃদয়ের কোণে উঠল বেজে,
আবারও বেঁচে থাকার আমন্ত্রণ ।।

দ্রৌপদী ব্রাহ্মণ কন্যা ছিলেন । বিয়ে হয়েছিল পাণ্ডবদের সঙ্গে । পাণ্ডবরা ছিলেন , ক্ষত্রিয় । কর্ণ কুন্তীরই গর্ভজাত সন্তান । সূর্য তাঁর বাবা । সূর্য দেব কুলের কিন্তু কুন্তী ছিলেন ক্ষত্রিয় কুলের । অনার্য কন্যা হিড়িম্বার পাণিগ্রহণ করে ভীম । বেদব্যাসের জন্মও তাই মৎসকন্যা । পরাশর মুনি তাঁর বাবা । বিদুর ছিলেন শূদ্রা জাত । বিদুরের জন্ম বিচিত্রবীর্যের এক সুন্দরী দাসীর গর্ভে দ্বৈপায়নের ঔরসে । কৃষ্ণ কিন্তু বর্ণশংকরের জাত । মা দেবকী বাবা বিষ্ণু ।

কৃষ্ণপুত্র শাম্ব ছিলেন অনার্যমাতা পরম সুন্দরী জাম্ববতীর গর্ভজাত ।

কেনো লিখলাম , লেখাটা ? লেখার মূল কারণ হলো , হিন্দু সমাজে জাতিভেদ প্রথা কি আদও ছিল ? ছিল না । চতুর ব্রাহ্মণদের ছিল বানানো প্রথা জাতিভেদ প্রথা বা বর্ণবৈষম্য প্রথা । হিন্দু সমাজ কে ভাঙার মূল খল নায়ক ছিলেন ব্রাহ্মণবাদ শক্তি । আজও যা হিন্দু সমাজে বহাল তবিয়দে বলোবদ আছে ।

অহর্নিশ

শান্তিনিকেতনের আকবরী মোহর

সে দিন খুব ঝড় উঠেছিল | সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি | সেই ঝড়ের মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে আম, জাম কুড়োতে আশ্রমের উত্তরায়ণে ছুটে বেড়াচ্ছিল একরত্তি মেয়েটি | কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি সেই ঝড় ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার নেবে | ভয় পেয়ে তারা ছুটতে শুরু করেছিল নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে | একটা বাড়ি সামনে পেয়েই তার দাওয়ায় গিয়ে উঠেছিল | এমন সময়ে মেয়েটির চোখ পড়েছিল বাড়িটার জানালার দিকে | সাদা চুল, সাদা গোঁফ-দাড়ি আর অপূর্ব দু’টি চোখ নিয়ে একজন তাকিয়ে আছেন বাইরে ঝড়ের দিকে। চমকে উঠেছিল মেয়েটি | তাঁকে চিনতে মেয়েটির দেরি হয়নি। এঁকে ঘিরেই তো শান্তিনিকেতন আশ্রম! এঁর গানই তো সে গায় সারাক্ষণ। দূর থেকে তাঁকে অনেকবার দেখলেও এত কাছ থেকে তাঁকে প্রথমবার দেখল মেয়েটি | বুক দুরু দুরু করছে | হয়তো এ বার বকুনি খেতে হবে।

না, তিনি বকেননি। বরং কাছে ডেকে প্রশ্ন করেছিলেন, “গান জানিস?” সে মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ জানাতেই তিনি বলেছিলেন, “শোনা দেখি!” মেয়েটি অবলীলায় গেয়ে উঠেছিল তাঁরই একটা গান । মানুষটা মুগ্ধ হয়ে শুনে বলেছিলেন, “ওরে বাবা, তুই এতটা শিখেছিস!” এর পরে তার পরিচয় জেনে নিয়ে বলেছিলেন, “মাঝেমাঝে এসে আমায় গান শুনিয়ে যাস।” এ ভাবেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অণিমা মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ ঘটেছিল শান্তিনিকেতন আশ্রমের উত্তরায়ণের ‘শ্যামলী’ বাড়ির দাওয়ায়।  সেই বিকেলেই অণিমা নাম বদলে কণিকা রাখলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন সেই অল্প কয়েকজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর মধ্যে একজন, যাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গান রেখে গিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রসংগীত সম্পর্কে সাহিত্যিক দেবেশ রায় লিখেছিলেন, ‘গায়ক সংগীতটি রচনা করে তুলছেন শব্দ, সুর দিয়ে। ঐ রচনার আগে ঐ সংগীতটি ছিল না। প্রতিটি গাওয়াই মৌলিক রচনা। প্রতিবারই গানটি নতুনতম রচিত হচ্ছে, রচনার প্রয়োজন থেকে গাওয়া হচ্ছে, গাইতে-গাইতে শোনা হচ্ছে। একজনই এই তিন কাজ করছে কোনও অলৌকিক গায়নে। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল সেই অলৌকিক গায়ন ক্ষমতা।' 

ছোট্ট মোহরকে খুব ভালবাসতেন গুরুদেব | ব্যক্তিগতভাবে নজর দিতেন তাঁর গানের উপর | শৈলজারঞ্জন মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকেই গান গাওয়ার তালিম নিয়েছিলেন মোহর। “গুরুদেবের সান্নিধ্য পেয়েছি সেই থেকেই। যখনই ওঁর কাছে যেতাম তখনই উপহারস্বরূপ হাতে এসে যেত লজেন্স বা বাদাম। আমার নানা দেশের স্ট্যাম্প জমানোর নেশা ছিল। রোজই প্রায় তাঁর কাছে যেতাম স্ট্যাম্প নিতে,” স্মৃতিচারণা মোহরের। 

‘নটীর পূজা’ নাটকে রত্নাবলীর চরিত্রে অভিনয়ের সূত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর ডাক নাম ‘মোহর’ নামে না ডেকে, ‘আকবরী মোহর’ বলে ডাকতেন। এর কারণ বোধহয় সম্রাট আকবরের তৈরি মোহর যেমন তাঁর পূর্ববর্তী সম্রাটদের তৈরি মোহরের থেকে আলাদা ছিল, তেমনই তাঁর সাম্রাজ্যের শক্তির প্রতীক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বিশাল মুঘল ভারতে। কণিকা তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে এক দিকে যেমন অন্যান্য গায়কদের থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন, অন্য দিকে ভারতীয় সঙ্গীতে রবীন্দ্রগানের সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করেছিলেন। 

মহান শিল্পীকে জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য |                                                                     

©  অহর্নিশ - Ahornish 
ছবি - বর্ষা কর্মকার ঘোষ 
তথ্য : আনন্দবাজার পত্রিকা (বাজে করুণ সুরে... এবং শান্তিনিকেতনের আকবরী মোহর প্রবন্ধ)