Sunday, August 7

আগে ও পরে



এইতো সেদিনের কথা, মোখলেসের মনে আনাচে কানাচে উপচে পড়ত সুখ। শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধু একজনের মুখই ভেসে উঠত চোখের সামনে। তার হৃদয় রাজ্যের রানী তার অপ্সরী তার প্রাণেশ্বরী তার মনের মানুষ জরিনা খাতুন। আহা তার রূপের ঝলকে মোখলেস এমনই অন্ধ যে দুনিয়ার আর কোন প্রাচুর্য মোহ তার চোখেই লাগতনা। জরিনা খাতুনও কম যায়নি কোন অংশে। উঠতে বসতে মিস কল মেরে মেরে মোখলেসের কর্ণপোকা নাড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করত। “ওই তুমি রাইতে খাইছ”? ওই তুমি মিস কল দেখবার পাওনা? ফুন দাওনা কেন?” কি ব্যাপার ফুন এতক্ষণ ব্যস্ত কয় কেন কার লগে এত কথা কও? ” ওই হুনো একখান নয়া ফিলিম আইছে আইজ কইলাম দেহান লাগব। মোখলেসও আহ্লাদে গদ গদ হয়ে মুখে স্নো পাউডার মেখে বোগলের তলে কড়া পারফিউম মেরে চোখের সানগ্লাস কপালে তুলে ছুটে যেত জরিনা খাতুনের কাছে। জরিনা ওড়না দিয়ে প্রিয়তমর কপালের ঘাম মুছে দিয়ে বলত “আহারে মুকডা কিরাম হুগনা হুগনা লাগে। ওই তুমি খাওন দাওন করোনা কেন”। আহ কি পিরিত যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে দুজন মানব মানবী এই মাটির ধরায়।

তারা ফিল্ম দেখত, পার্কে ঘুরে ঘুরে বাদাম চিবুতে চিবুতে নতুন জীবনের গল্প করত | কে কাকে কতটা ভালবাসে তা বোঝানোই যেন তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোখলেস গার্মেন্টস এর সামান্য বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী। যা কামাই করে তাতে তার নিজেরই দিন কাটে কোন রকমে। এদিকে জরিনা বিয়ের জন্য বারবার অনুরোধ করছে। মোখলেসও জরিনাকে পাশে চায়। জরিনা অনেক রকম আশ্বাস দিল, বলল মোখলেস কে সে দেবতার মত পূজা করবে, ভালবেসে তাকে পূর্ণ করে দিবে হ্যান ত্যান আরও কত কি। এইবার যে ঘর বাঁধতেই হবে। হার মানল মোখলেস। অবস্থা এমন “ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া, করতে হবে এবার বিয়া”। যাক অবশেষে এল সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত। তারা ভালবেসে নতুন জীবন শুরু করল।

এইতো গেল বিয়ের আগের গল্প। কিন্তু পরের গল্প কি ততোটাই মধুর ছিল? প্রথম কিছুদিন ভালই চলেছে, কিন্তু এরপর থেকেই সব বদলে যেতে থাকে। ঐ যে কথায় বলেনা অভাব যখন দরজায় কড়া নাড়ে ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। শুধু যে অভাবই দায়ী তা ঠিক নয়, আসলে বহু কাঙ্খিত কোন কিছু হঠাৎ পেয়ে গেলে মানুষ সে জিনিস টির প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। জরিনার বেলায়ও তাই হল। কথায় কথায় ঝগড়া, চিৎকার চেচামিচি, জিনিসপত্র ভাংচুর, রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাওয়া বারবার, উঠতে বসতে স্বামীকে খোঁটা দেওয়া এ সবই শুরু হল। বদলে গেল জরিনা। মেজাজ যেন সপ্তম আসমানে। বেচারা মোখলেস তো তখন গৃহকর্তীর অত্যাচারে প্রাণ ত্যাগ করে এই অবস্থা। ভয়ে ভয়ে চুপসে থাকে। ভাবে বিয়ের আগে এই মেয়ে কত শান্ত ছিল আর এখন কেমন হয়ে গেল। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। ভাগ্যের লিখন তাকে যে মেনে নিতেই হবে। নিরবে চোখের জল ফেলে আর কবিতা লিখে দিন যায়।

মনে মনে ভাবে দেখা যাক কতদিন জীবন প্রদীপ টিকে থাকে প্রচণ্ড এই কালবৈশাখীর ঝাপটা এড়িয়ে,,,,,,,,,

নিচের কবিতা খানি মোখলেসের লেখা,  তাও একদিন জরিনা খাতুনের চোখে পড়ায় তাকে ছিড়ে কুচি কুচি করে ফেলা হয়েছিল |


অরুণি মায়া অনু