Thursday, October 20

অদিতি মুখোপাধ্যায়


কচুর শাকের কথকতা



আমি বাঙাল বাড়ির মেয়ে। কাঠ বাঙাল যাকে বলে আর কি। এর মানে হলো আমার মামাবাড়িও বাঙাল, নিজের বাড়িও বাঙাল। আবার কপাল দেখুন, বিয়ে ও হলো বাঙাল বাড়িতে। তাই অনেকের মতো আমায় বিয়ের পরে খাওয়াদাওয়া নিয়ে বিশেষ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। উল্টে আমার ননদের সখই হলো নিত্য নতুন রান্না করে সবাইকে খাওয়ানো। মিথ্যা বলবো না, দিদিভাই, আমার মতে Michelin star সেফদের থেকে ভালো রান্না করে। তো বিয়ের পর দিনগুলো ভালোই কেটে যাচ্ছিলো।

তবে আমার কপালে সুখ আর কোলকাতায় শীত, দুজনেই ক্ষণিকের অতিথি। এক সপ্তাহের মধ্যে লোটা-কম্বল গুটিয়ে আসতে হলো আমেরিকা। আমি যে কতো বড় রাধুনী ছিলাম সে গল্প তো আগেই করেছি। সে কথা থাক, তো আমেরিকা আসার আগেই আমি নিজের মনকে বুঝিয়েছিলাম যে কিছু কিছু খাবার যেমন কচু বাটা, সবেদা, বিলাতি আমড়া, লতি, শুটকি মাছ এগুলো কোনোটাই আর এই জন্মে খাওয়া হবেনা। তার মধ্যে একটা খাবার হল কচুর শাক। ছোলা হোক বা ইলিশ মাছের মাথা, ঝাল ঝাল রান্না করলে খেতে যা লাগেনা। এখানে সেসব অলীক কল্পনা মাত্র। তবে এখানে গাছের দোকানে কচু গাছ বিক্রি হয়। ঘর সাজানোর জন্য। মনে মনে ঠিক করেছিলাম একদিন ওই গাছ কিনে, ওটাকে কেটে কচুর শাক খাবো। কিন্তু সে সখ আমার আর পূর্ন হয়নি।

তারপর হঠাৎ একদিন আমাদের বাড়ির কাছে পাঞ্জাবী দোকানে দেখি কচুর শাক বিক্রি হচ্ছে। আর আমায় পায় কে? কিনে নিলাম এক আটি। কিন্তু বিধি বাম। যে দিন রান্না করবো ঠিক করলাম, তার আগের রাতে এমন অ্যালার্জি বেরোলো যে সকালবেলা পতিদেব অফিস ফেলে আমায় নিয়ে ছুটলো হাসপাতালে। ওষুধ খেয়ে একটু সুস্থ হয়ে ঠিক করলাম পরদিন রান্না করবো। এদিকে অরিন্দম তো ভয়ে মরছে, যদি কচুর শাক খেয়ে আবার বাড়াবাড়ি হয়। ওকে আশ্বাস দিলাম, যে এই সুযোগ। এমনি এখন সাতদিন অ্যালার্জির ওষুধ খেতে হবে। কচু খেয়ে গলা চুলকালে বা অন্য কোনো সমস্যা হলে টের পাবো না। এক ঢিলে দুই পাখি আর কি। প্রায় ঘন্টা খানেক লেগেছে কেটে, বেটে, রান্না করতে। কিন্তু গরম ভাতে এ যেন অমৃত। খেয়ে মনে হলো, "ইহাতেই সর্ব সুখ, আমার বিশ্বাস"। বেচেঁ থাকুক বাঙাল বাড়ির রান্না, বেচেঁ থাকুক Apna Bazaar।

No comments:

Post a Comment

লেখা পড়ুন এবং মতামত জানান ।