Saturday, December 10

মন্মথ হালদার



বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি রহস‍্য


একাদশ পর্ব(শেষ)


আমাদের এই পৃথিবীর বয়স প্রায় ৫০০কোটি বছর।পাহাড় পর্বত,নদীনালা ,সমুদ্র,অরণ‍্য,মরুভূমি,তুষারভূমি সব মিলিয়ে পৃথিবীকে মনে হয় কতই না স্থিতিশীল।অবশ‍্য মাঝে মাঝে ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন‍্যুদগার শুধু একটু ছন্দপতন ঘটায়।আমাদের জীবনকাল এই পৃথিবীতে এত স্বল্প যে পৃথিবীর পৃষ্টভাগরূপী ত্বকের নাড়াচাড়া আমরা বুঝে ও উঠতে পারি না।

চলমান মহাদেশ---
প্লেট টেকটনিক্স তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ ছোটবড় তেরটি প্লেটের সমবায়ে তৈরী।এই প্লেটগুলি যখন পরস্পরের গা ঘেসে আনুভূমিক বা লম্বভাবে নড়াচড়া করে ,তখন ভূতাত্ত্বিক নানা পরিবর্তনের খেলা শুরু হয়ে যায়।ভূকম্প,আগ্নেয়গিরির আগ্ন‍্যুদগার,নতুন দ্বীপের সৃষ্টি বা পুরানো দ্বীপের সাগর সমাধি-- প্রতিটি ঘটনার মূলে রয়েছে এই প্লেট টেকটনিক্সের খেলা।আমাদের মহাদেশগুলো ও এই প্লেটগুলির ঘাড়ে চড়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগের উপর দিয়ে চলয়মান অবস্থায় আছে।অবিশ্বাস‍্য মনে হলে ও এর স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমান আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে আজ থেকে কুড়ি কোটি বছর আগে পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশগুলি একটি মাত্র অতিকায় ভূখন্ডের মধ‍্যে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় ছিল।এই অতিকায় মহাদেশটির নাম ছিল প‍্যানগিয়া।এই প‍্যানগিয়া ভেঙ্গে যাবার পর পৃথিবীর ভূভাগ দূটি ভাগে ভাগ হয়েছিল।উত্তর আমেরিকা,ইউরোপ,গ্ৰীনল‍্যান্ড এবং উত্তর এশিয়া--এই মিলিত ভূখন্ডের নাম দেওয়া হয়েছিল লরেশিয়া।এই সময় আটলান্টিক মহাসাগরের কোন অস্তিত্বই ছিল না।
দক্ষিন আমেরিকা,আফ্রিকা,ভারতবর্ষ,অষ্ট্রেলিয়া,পলিনেশিয়া এবং আন্টার্কটিকা  এই মিলিত ভূখন্ডের নাম দেওয়া হয়েছিল গন্ডোয়ানাল‍্যান্ড।ভারত মহাসাগরের অস্তিত্ব তখন ছিল না।সারা পৃথিবীজুড়ে ছিল একটিমাত্র মহাসাগর।

মাত্র কুড়ি লক্ষ বছর আগে ও উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা ছিল দুটি স্বতন্ত্র বিচ্ছিন্ন মহাদেশ।এক কোটি ষাট লক্ষ থেকে এক কোটি আশি লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশ ইউরোপ থেকে এক অগভীর সমুদ্রের দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল।

গান্ডোয়ানা ল‍্যান্ড দশ কোটি বছর আগে প্রথম ভাঙ্গতে শুরু করে।

আফ্রিকা,ভারতবর্ষ,অষ্ট্রেলিয়া,পলিনেশিয়া এবং কুমেরু মহাদেশ---গান্ডোয়ানাল‍্যান্ডের এই ভাঙ্গনের টুকরোগুলো আজ পরস্পরের কাছ থেকে কত দূরে সরে গেছে।ওদের পথচলা কিন্তু আজও শেষ হয়নি।ভারতবর্ষের প্লেটটির অংশ এশিয়া মহাদেশের প্লেটের উপর সংঘাত সৃষ্টি করছে।ভারতবর্ষের প্লেটটি যত এগোছে সামনের ভূভাগের উপর তত চাপসৃষ্টির ফলে হিমালয়ের মত বিরাট উঁচু পাহাড় তত মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।

পৃথিবীর দুটি টেকটনিক প্লেটের সংঘাতের ফলে সৃষ্ট হিমালয়ের পার্বত‍্য অঞ্চলে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম সমৃদ্ধ এলাকা রূপে গড়ে উঠেছে।সুদীর্ঘকাল ধরে বহুনদীর বিপুল পরিমাণ পলি এখানে জমা হয়েছিল।ফলে প্রাচীনকালের বহু প্রাণীর দেহবাবশেষ ও রয়েছে এই পলির মধ‍্যে।এই সঞ্চয়নের পালা চলতে চলতে সেই পলির উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ছয় কিলোমিটার।এই পাললিক অবশেষ ভারতীয় প্লেটের সংঘাতে উপরে উঠে এসে গড়ে তুলেছে শিবালিক পাহাড়কে।হিমালয় পৃথিবীর নবীনতম পর্বত,বয়স দেড় কোটি বছরের মত।হিমালয়েরই অংশ শিবালিক পাহাড়ের বয়স ও এর কাছাকাছি।

অতীতের যে কোন প্রাণী আমাদের পূর্বপুরুষ সহ মারা যাবার সঙ্গে সঙ্গে দেহের হাড়গোড় পলির তলায় চাপা পড়ে,ফলে অতীত পৃথিবীর প্রাণীজগতের জীবাশ্মের সন্ধান পাবার জন‍্য ভূতাত্ত্বিকদের সেইসব অঞ্চলকেই বেছে নিতে হয় ,যেখানে টেকটনিক পর্যায়ের আন্দোলন ঘটেছে,পৃষ্টভাগ ক্রমাগত ক্ষয় পেয়ে পলির স্তর তৈরি করে রেখেছে।হিমালয়ের শিবালিক পাহাড় এবং পূর্ব আফ্রিকা হল এরকম দুটি সম্ভাবনাপূর্ণ জায়গা।


No comments:

Post a Comment

লেখা পড়ুন এবং মতামত জানান ।