Sunday, November 27

মন্মথ হালদার


বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড সৃষ্টির রহস‍্য


দশম পর্ব



(মানুষের যথাযথ পূর্ব পুরুষদের সন্ধান পাওয়া গেল)

"I am Fully convinced that species are not immutable;but those belonging to what are called the same genera are lineal descendants of some other and generally extinct species."Darwin.

লুসি--নামটা পরিচিত হলে ও আসলে১৯৭৪সালে জীবাশ্মবিদ ডন ও তার সহকর্মী টম গ্ৰে আফ্রিকার ইথিওপিয়াতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এক বিস্ময়কর জীবাশ্বের সন্ধান পেলেন;মানুষদের কংকালের প্রায় ৪০ভাগ সামগ্ৰী।তাঁরা এর নাম দিলেন লুসি।আজ থেকে ৩০লক্ষ বছর আগআমাদের পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম।

শ্রোণীপ্রদেশের(pelvic)হাড়ের গঠন থেকে বোঝা গিয়েছিল যে লুসি ছিল একটি মেয়ে।মাত্র কুড়ি বৎসর বয়সে ওর মৃত‍্যু হয়।
আমাদের পূর্বপুরুষ অস্ট্রালোপিথেকাসের জীবনযাত্রা ছিল খুবই সরল।খাদ‍্যসংগ্ৰহ ছিল প্রধান কাজ।গাছের ফলমূল,প্রাণীশিকার,পোকামাকোড়,পাখীর ডিম,এমনকি খাবার না পেলে ঘাস পর্যন্ত খেত।পুরুষ,মেয়ে এবং শিশুদের নিয়ে এক একটি গোষ্ঠী এক জায়গা থেকে অন‍্য জায়গায় ঘুরে বেড়াত।রাতের বেলা পাথর ঘেরা কোন জায়গায় বা গুহায় আশ্রয় নিত।হিংস্র জানোয়ারদের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটাই ছিল নিতান্ত কষ্টকর।
এবার আমাদের গন্তব‍্যস্থল এশিয়া মহাদেশ।আমাদের পূর্ব পুরুষদের দুই নায়ক,পিথেক‍্যানথ্রোপাস ইরেকটাস,ওরফে জাভা মানুষ এবং সিনানথ্রোপাস,ওরফে পিকিং মানুষ।গোষ্ঠীগত পরিচয় :হমো ইরেকটাস।আমাদের এই পূর্বপুরুষদের উদ্ভবের সময়কাল আনুমানিক পনের লক্ষ বছর আগে,পরিসমাপ্তি আনুমানিক তিন লক্ষ বছর আগে।

ডারউইন তাঁর "The descent of man "গ্ৰন্থে লিখেছিলেন ,চারটি নর-বানরের মধ‍্যে গরিলা ও শিম্পাঞ্জী হল মানুষের সবচেয়ে কাছের আত্মীয়।কিন্তু মানুষের পূর্বপূরুষ নর-বানরেরা নয়,নর-বানর জাতীয় একটি প্রাণী।কিন্তু ডারউইনের এই তত্ত্ব মেনে নিতে চাননি হল‍্যান্ডের অধ‍্যাপক ইউজিন দুবোয়া।তাঁর প্রেরণার উৎস ছিল রাসেল ওয়ালেসের রচনাবলী।১৮৮৭সালে দুবোয়া সেনাবাহিনীর ডাক্তারের চাকরী নিয়ে সুমাত্রায় এলেন।সুমাত্রায় ম‍্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জাভাতে এলেন দুবোয়া।সেখানে বাঙ্গাওয়ান নদীর ধারে ট্রিনিল নদীর ধারে খননকার্য চালানোর সময় প্রথমে একটি দাঁতের সন্ধান পান,তারপর তার বহু প্রত‍্যাশিত পূর্বপুরুষের একটি মাথার খুলি পান।উৎসাহিত হয়ে উঠলেন দুবোয়া ,বুঝলেন এতদিন পূর্বপুরুষদের সাথে যোগসূত্রের সন্ধান পেয়েছেন তিনি।মাথার খুলিটির আয়তন ছিল প্রায় ১০০০ঘন সেন্টিমিটার।এরপর উরুর হাড়ের সন্ধান পান,পরীক্ষা করে বুঝলেন এই পূর্বপুরুষ সোজা হয়ে হাঁটতে পারত।

জাভা মানুষ--বিবর্তনের ধারায় এক বিরাট ধাপ ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস থেকে জাভা মানুষ।এদের মগজের আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৫০থেকে১০০০সি,সি।মগজের বিকাশ ,বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের পেছনে একটা বড় ভূমিকা হল অর্থবোধক শব্দের মাধ‍্যমে কথা বলা।জাভা মানুষেরা অপেক্ষাকৃত উন্নত পাথরের অস্ত্রের মাধ‍্যমে শিকারে নৈপুন‍্য অর্জন করেছিল এবং বেশী পরিমানে মাংসাশী হয়ে উঠেছিল।যারা শিকারে নৈপুন‍্য লাভ করেছিল তারাই দলপতির ভূমিকা গ্ৰহন করত।বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন,জাভা মানুষেরা পরস্পরের মধ‍্যে অর্থবোধক শব্দের মাধ‍্যমে কথা বলার ক্ষমতা অর্জন করেছিল।কাঁচা মাংস খাওয়ার ফলে হাইপারভাইটামিনোসিস ব‍্যাধিতে এরা মাত্র ২০/২২বছরের মধ‍্যে মারা যেত।

পিকিং মানুষ--চীনের রাজধানী পিকিং শহরের দক্ষিন পশ্চিমে একটি ছোট্ট শিল্পাঞ্চল হল চৌকুতিয়েন।এরই কাছে দুটি চুনাপাথরের পাহাড়।পিকিং মেডিক‍্যাল কলেজের শরীরতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ডেভিডসন পাহাড় দুটিতে খননকার্য চিলিয়ে দুটি দাঁতের সন্ধান পান।এরপর চীনের জীবাশ্মবিদ পাই-ফেন-চুং মাথার খুলির জীবাশ্ম পান।আয়তন ছিল ১১০০ সি,সি।এ পর্যন্ত এই গুহা থেকে ৪০টি হমো ইরেকটাসের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।এরা আগুনের ব‍্যবহার জানত,গুহার মধ‍্যে প্রায় ছয় মিটার পুরু ছাইয়ের স্তূপ পাওয়া গেছে।
নেয়ানডার্থাল মানুষ--১৮৫৬খৃঃ জার্মানীর ডুসেলডর্ফ শহরের কাছে নেয়ানডার্থাল উপত‍্যকায় একটি গহ্বরের মধ‍্য থেকে খননকার্য চালাবার সময় একটি মাথার খুলি ও বেশ কিছু হাড়ের জীবাশ্ম পাওয়া যায়।এই ধরণের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ইংল‍্যান্ড,উজবেকিস্তান এবং ইসরাইলে।এক উন্নতমানের জীবন যাত্রার অধিকারী ,পাথরের নিপুন অস্ত্রের নির্মাতা এবং ভাষার অধিকারী নেয়ানডার্থাল যুগের মানুষ ৩৫০০০/৪০০০০ বছর আগে পুরোপুরিভাবে অন্তর্হিত হয়ে গেল।
আধুনিক মানুষ--ইউরোপে হমো স‍্যাপিয়েন্সর প্রথম প্রতিনিধি হল ক্রো-ম‍্যাগনন।১৮৬৮সালে ফ্রান্সের ক্রো-ম‍্যাগনান অঞ্চলে আমাদের পূর্বপুরুষের একাধিক মাথার খুলি এবং কংকালের জীবাশ্ম পাওয়া যায়।আধুনিক মানুষের ঠিক পূর্বের ধাপ।এরা পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখেছিল শীতের আক্রমন থেকে আত্মরক্ষার জন‍্য পোষাক ও তৈরী করে নিত।এরাই পৃথিবীর প্রথম চিত্র শিল্পের স্রষ্টা।ফ্রান্সের লাস্কক্স অঞ্চলে,স্পেনের আলতামিরাতে,ভারতের ভীমবেটকা অঞ্চলে এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এদের চিত্রশিল্পের নিদর্শন রয়েছে।
বর্তমানের পনের হাজার বছর আগে পর্যন্ত মানুষ ছিল যাযাবর প্রকৃতির।খাদ‍্যের প্রয়োজনে চাষের কাজ শুরু হল।আর তারই প্রয়োজনে মানুষকে স্থায়ীভাবে বসতি গড়তে হল।পৃথিবীর গ্ৰামীন সভ‍্যতাগুলি এভাবেই গড়ে ওঠে বর্তমানের দশ থেকে পনের হাজারবছর আগে।আর গ্ৰামীণ সভ‍্যতাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর প্রথম যুগের নগর সভ‍্যতাগুলি।


(পৃথিবীতে প্রথমে একটি মহাদেশ এবং একটি মহাসাগর ছিল,কিভাবে তার বিভাজন হল,কিভাবে  গড়ে উঠল হিমালয় পরবর্তী শেষ পর্বে তা আলোচিত হবে।)

No comments:

Post a Comment

লেখা পড়ুন এবং মতামত জানান ।