Sunday, October 16

দুর্গা শংকর বন্দ্যোপাধ্যায়

এখন জ্যৈষ্ঠ মাস


পড়ন্ত বিকেলে
আউটরাম ঘাটে সেদিন
হেমন্তের হ্যাংলা বাতাসটা উড়িয়েছিল
আমার কাঁচাপাকা চুল,
ভার্সিটি পালানো ইরা, দুলেছিল তোমার দুল।
সন্দেহ ভরা ছিল তোমার অবিশ্বাসী চোখ,
দেখতে চাইছিলে আতিপাতি
আমার লড়াকু অভিজ্ঞতা, সে ছিল কঠিন পরখ।
কুঞ্চিত চোখের চামড়া-
আমার কপালে বলিরেখার ভাঁজে ভাঁজে
উদ্ধত অতীতে মুর্খামির খোদাইগুলো দেখছিলে আগ্রহ ভরে,
তোমার মনের আস্থা বাড়াতে।
মাপকাঠি নাম্বার টু।
শার্টের তিনটে বোতাম খুলে উন্নত
ছাতির অজস্র রোমকূপে
তোমার তেইশী হাতের পরশ দিয়ে
পরীক্ষা করেছিলে
পিয়াসী হৃদয়ের কামনা, তিন নম্বর পরীক্ষা।
দুই ঠোঁটের ক্ষণ সঞ্চালনায় অজান্তেই শুনিয়েছিলে বাণী,
সহমর্মিতার, ভালোবাসার।
আর যুদ্ধ নয়, এসো, আমি শান্তিকামী।
ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে উড়ে আসা পাখিটা বসলো এসে আকাশমনির ডালে,
ওটা বউ কথা কও।
ঝোপের ভিতর কোন বেওড়া শিস দিয়ে শুনিয়েছিল,
"হৃদমাঝারে রাইখবো, ছেড়ে দেবো না"
শিহরণ জাগানি খসখস শব্দ, ওরা একা নয়, সরীসৃপ জড়াজড়ি, সঙ্গিনী বেপথু।
শিস শুনে হঠাৎ তোমার চোখে জমলো বাদুলে মেঘ,
হুশ করে জল দাপিয়ে ভাগীরথীর বুকে,  
ছুটে গেল মোটরবোট, বাড়িয়ে বেগ।
একী, ধরলে হাত, থামলে না,
এখন জ্যৈষ্ঠ মাস, কাঁঠালের আঠা-
ছাড়লো না।



কয়েস বিন আমর

মেঘে মেঘে 


মেঘের দেশে কোন সে কৃষ্ণকায়া!
আকাশ থেকে বৃষ্টি কেন ঝরে?
বুকের ভেতর অবুঝ মনের মায়া
কার তরে গো শুধুই কেঁদে মরে।

বৃষ্টি, নাকি কান্না তোমার চোখে
অঝোর ধারায় ঝরে মাটির বুকে, 
মেঘলা দিনে বিবশ কাহার শোকে
কান্না হাসির দোদুল দুঃখ সুখে!

 মেঘে মেঘে ঝরে মুক্তোবারি 
তোমার চোখে চিকুর চমক জ্বলে, 
মাঠের বুকের সবুজ স্বপন কাড়ি
মায়ার খেলা দীপ্ত গগনতলে।

তোমার চোখে রামধনু রঙ ভাসে 
মেঘের দেশে মেঘবালিকা হাসে ।

কৌশিক দে সরকার

অনুরোধ 


নাইবা  আমায় ভাবলে কাজের মাঝে
একটু শুধু পড়তে দিও ছায়া ;
তোমার সুখের ভাবনা গুলির পাশে
একটু শুধু জড়িয়ে রেখ মায়া।
মায়ার আবেশ জড়িয়ে জানাই শুধু
একটু শুধু স্মৃতির পাতা দেখো;
পৃষ্ঠা জুড়ে শব্দ রাজির মাঝে
একটু শুধু যত্নে সাজিয়ে রেখো।
নাহয় আমি ফাগুন রঙের মাঝে
একটু শুধু আবছা রঙের দাগ;
দরবেশ আর কানারা রাগের মাঝে 
একটু হালকা মিষ্টি ইমন রাগ।


কবির মৃত্যু 


কবির মৃত্যু হয়না কভু জেনো,
মরছে যত কবি সাজার দল;
পাঠক নিজেই কবিতা লেখে আজ
বাঁচবে কবি কি-নিয়ে তবে বল! 
সম্পাদনায় উড়ল কত বয়স
কবিতা নিয়ে কত রকম খেলা ;
চিতার কাঠ জ্বলছে নাতো ভালো
সাধের কাগজ খাটের নীচে ফেলা।
শব্দগুলো জ্বালিয়ে ছিল আগুন
শাসক শ্রেণি পুড়িয়ে দিল সব
ধীরে ধীরে পুড়ছে কবির মেধা
ভাঙ্গতে প্রথা উঠিয়ে ছিল রব।
উঠতি কবি  সঙ্গে ছিল যত
ভাবলো বসে করবে স্মরণিকা ;
হাতের গয়না খুলল সাদাশাড়ি
হবেই সম্পাদক বা প্রকাশিকা। 
গড়তে চেয়ে নতুন ধারার লবি
দেওয়ালে এখন তিনি নিজেই ছবি
রক্ত যখন ছুটছে শিরার পথে
মন্ত্রগুপ্ত বানিয়েছিল কবি।
সবাই যখন ছুটতো স্মারক নিতে
মঞ্চে উঠে নিতো শংসাপত্র 
বলতো কলম ঝড়িয়ে আগুন শব্দ
সাহিত্য আজ হয়েছে জলছত্র। 
গতানুগতিক কবিতাগুলো ফেলে 
লিখবে এসো নতুন লেখা কিছু
ওয়ার্কশপে কবিতা শেখান যদি
সোনামণিরা ঘুরত পিছু পিছু।
আজকালতো পাঠক মোটেই নেই 
যারা পাঠক তারাও লেখে কিছু
আসল কবি নকল কবির মাঝে
মঞ্চ থেকে দেখতে লাগে নীচু।
জ্বলবে চিতা এমন শত শত
মরবে কবি সম্পাদকের দল
এসব বুঝেও সুধায় কবি হেসে
কবিতাটা কেমন হল - বল। 


ছবির খাতা


তোমার কাছে দিলেম খাতা,  সাদা পাতার গোছ
দৃষ্টি  দিনে  লজ্জা মাখা জোড়া পানের খোঁজ।
একলা ঘরে প্রতীক্ষা স্নান মেঘের পাতায় জল
ভয় ছিল লজ্জা ছিল  যখন ছিল ছল।
গোল্লা ছুটের  ফ্রক ছিল প্রজাপতির পাখা
ক্লান্ত হয়ে পা ছড়িয়ে ঘাসের আদোর মাখা।
তোমার কাছে দিলেম খাতা গালের টোল এঁকো
সব্জি বাজার সুখের আলনা গুছিয়ে রাখা শেখো।
বৃষ্টি দিনে শাড়ির আঁচোল কোমড়ে গুঁজে রাখা
সৃষ্টি সুখে আগলে রাখা মা ষষ্টীর পাখা।
তোমার কাছে দিলেম খাতা মাঝে ময়ূর পালক
মেঘের পাশে দিচ্ছে উঁকি  সুখের মতো আলোক।
ছড়িয়ে সবুজ হলুদ সাদা  আঁকতে দিলেম ছবি
আকাশ এঁকে বলছো তুমি আমার মতো হোবি?


ভ্রম


এক ঝুড়ি তারা চেয়ে
পেলেম শুধু লজ্জা;
আসলো ধেয়ে হাজার ঢেউ
শীতল হলো মজ্জা।
ঝিনুক খুঁজি তারার আলোয়
সোনার বালি হাতে;
সাগর ঢেউয়ের দুধের ফেনা
ভেজায় আমায় রাতে।
অমৃত আজ বাতাস যেন 
নিজের থেকে এসে;
অমর করে সাজিয়ে দিল
দেবতাদের বেশে।
নিভলো বাতি জ্বলল আগুন
পুড়লো সারা শ্রম;
শীতল প্রলেপ রাত্রি নীল
গাঁথল মালা ভ্রম।
ক্লান্ত নয়ন শূণ্য আকাশ
ভোরের পাখির হাসি;
দিনলিপিতে তৈরী ছিল
প্রত্যায়ণের বাঁশি।।

জ্ঞানশংকর মহান্তি

নৃপূংশক

হাত পা ছোঁড়ায় ক্রমে বলহীন। মর্মভেদী আর্তনাদ।
মর্যাদা গেলে শরীর-মনের বাঁধে চরম বিসংবাদ।

ক্ষমতালোভী রাক্ষস তারা ধরল চেপে গলা
প্রাণের নিবাস দেহখানি হল জীবিত মাংসদলা।

অন্তর ছেড়ে নিরুদ্দেশে কোথা অন্তর্যামী
অন্ধ ললাটে লেখা ছিল শুধু ক্লেশ-ক্লেদ আর গ্লানি।

হাতের ফাঁদে সর্বশরীর বাঁধা নাগপাশে তার
চাপা দেওয়া মুখে গুমরে ওঠে অসহায় চীৎকার।

সেই চীৎকার মন্থনে যারা পূর্ণ করছে রাক্ষুসে শখ
যে ওষুধে তাদের পৌরুষ বাড়ে আমায় বানায় নৃপূংশক।

যে পৌরুষে রক্ত মাখা অবদমিতার যাতনা-ক্ষোভ
চাই না আমার সেই পৌরুষ ধন্য আমি নৃপূংশক।


হেরে যাওয়ার অপেক্ষায়


এত তাড়া কিসের
আর একটু সবুর কর
ও আসবে।

সুতপা গেছে,
ঈশিকা আসবে,
বৃষ্টি গেলে মেঘ।

সময়?
কি হবে সময় জেনে?
গড়ার সময়
সময় আমায় ভেঙ্গেছে 
মানুষ হওয়ার সময় আমাকে
অমানুষ বানিয়েছে।
সেদিন সময় আমায় নষ্ট করেছে,
আজ আমি সময় নষ্ট করছি।

আরে সিগারেটটা হাওয়ায় পুড়ছে যে
আর দু গ্লাস বিয়ার ঢালি
অপেক্ষা কর, ও আসবে

শেষতক ও আসবে।


প্রলাপ

ভালোবাসা আমি বুঝিনাতো সখী--কোনদিনো বুঝবনা।
আমি শুধু বুঝি মানবিক-বোধ জীবনের যন্ত্রণা।

অধিকার কেউ দেয়না কাহারে। অর্জন করে নিতে হয়।
তবে কেন দিয়েছিলে অধিকার তোমাকে করতে জয়।

প্রেম বুঝিনাতো। স্বার্থ বুঝি।বিশ্বকে ভাবি ঘর।
সবারেই ভাবি নিজের বলে। বড়ই স্বার্থপর।

অনেক আঘাত দিয়েছি তোমাকে।কি'ই বা করেছি প্রমাণ?
বড়ো কিছু করে বড়ো হতে চেয়ে--সবথেকে ছোট হলাম।

তোমারি কাছেতে শিখেছি কিভাবে কথা বলে নীরবতা।
তোমাকে হারিয়ে নীরবে কেঁদেছি গোপনে রেখেছি ব‍্যাথা।

কালের বলি তুমি আর আমি। নেইতো কাহারো দোষ।
বিরহের যে বাজলো সানাই--সেযে রুদ্রের আক্রোশ।

বেঁচে থাকি চল কাল বাহুপাশে। সুখে হাসো প্রিয়তমা।
মনে রেখো শুধু কাউকে আমরা করতে শিখিনি ঘৃণা।

তোমার-আমার আদর্শ এক দুজনী হৃদয় কাঙাল,
জীবন যুদ্ধে সরাব পৃথিবীর যাবতীয় জঞ্জাল

অতি দস্তুরে তর্ক বাড়ে; ব‍্যথা পায় হত মন।
কথার পাহাড় ফেলে রেখে এস শানাই আক্রমণ।

প্রিয়ব্রত রায়

ছিন্নমূল

গোপালের আঙিনায়
রহিমের সীমানায়
লাউগাছ একটা
পুঁতেছিল মাগ্ টা
আঁকশিতে পেঁচিয়ে
উঠছিল উঁচিয়ে
ভাবছিল শীতকালে
পৌঁছবে কার চালে
পড়শির ঝগরায়
লাউগাছ বিগরায়
টানপড়ে শিকড়ে
পড়ে গেল ফাঁপড়ে
উঠছিল লতিয়ে
হেলেপড়ে নেতিয়ে
ছিন্নমূল লাউগাছ
বোঝেনাতো মারপ্যাঁচ
কে মুসলিম কে হিন্দু
ছেড়ে গেল ভবসিন্ধু

মানস চক্রবর্ত্তী

এই ফ্রি সটাইল এই বাটারফ্লাই


এভাবে নেমে গ্যালো একটা পথ 
বৃষ্টিতে ছাতা মাথায়
একটা একা পাখি উড়ে গ্যালো 
উঠোনের শিউলি ডাল ছেড়ে অনির্দেশের দিকে
একটা উজ্জ্বল শাড়ির আঁচল উড়ে  
চিল্কায় গিয়ে কিকরে যে মাস্তুল হয়ে গ্যালো

এত মোটাসোটা গীতাঞ্জলীর অক্ষর ঝ'রে বৈধব্যের নোটবই এখন

কেবল  আমরা সাঁতার শিখছি রোজ
এই ফ্রি স্টাইল তো এই বাটারফ্লাই
এদিকে জল নেই নদীতে এক আঁচলাও
খেয়াল নেই কারও