Tuesday, August 9

মেঘলা আকাশ

সানু দাস

আজ রবিবার ,ছুটির দিন ।কাজে যাবার তাড়া নেই ।তাই জানালার ধারে চেয়ারে বসে
বাম পায়ের ওপর ডান পা টা তুলে দিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকাতে চোখ বোলাচ্ছে
আকাশ ।বাইরে তুমুল বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ছে শ্রাবনের আকাশে জমে থাকা অভিমানী
মেঘগুলো ।
একে ছুটির দিন তার ওপর আবার বৃষ্টি ; তাই বোধহয় আকাশের শরীরে কেমন একটা
অলসতা ভাব লক্ষ্য করছে আকাশ নিজেই ।
মাত্র ৩০ বছর বয়স আকাশের ।স্কুল মাস্টারীর চাকরী করে ।তার বাবা আর মা
দুজনেই গত হয়েছেন ।স্ত্রী অতসী আর ২ বছরের ছেলে আয়ুশ কে নিয়ে দিব্যি কাটে
তাদের দিন গুলো ।ছোট সংসার ,সুখী সংসার ।
স্ত্রী আর ছেলেকে আকাশ গত পরশুদিন গিয়ে শশুর বাড়িতে রেখে এসেছে ।আজ এই
বৃষ্টির দিনে ওরা দুজন থাকলে বেশ ভালই হতো ।মাছ ভাজা আর বেগুন ভাজা দিয়ে
খিচুড়ি খাওয়া যেত তিনজন মিলে ।কিন্তু কী আর করা যাবে ! আকাশ আবার ভালমতো
রান্নাটা ও করতে পারে না ।তাই আজকে ও তাকে হোটেল থেকেই খাবার কিনে খেতে
হবে ।এই সব কথা চিন্তা করছে আকাশ ,হঠাত এমন সময় দেওয়ালে টাঙানো ঘড়িটা ঢং
ঢং করে ১১টা বাজার জানান দিলো ।জানালার দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখল যে বৃষ্টির
গতিবেগ আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে ।তাই আর দেরী করা ঠিক হবে না ভেবে আকাশ
একটা ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল বাজারে যাবার উদ্দেশ্যে ।
বাজারটা অবশ্য বেশী দূরে নয় ,আকাশের বাড়ি থেকে পূর্ব দিকে ১০ মিনিটের হাঁটাপথ ।
বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে বাজারের তিন নম্বর দোকান 'শ্রী হরি হোটেল' ।ওই
হোটেলটা থেকেই আকাশ বেশীর ভাগ সময় খাবার কেনে ।আজকে আকাশ ১ প্যাকেট
বিরিয়ানী এবং কিছু পরিমান শশা আর টমাটো বাজারের অন্য দোকান থেকে কিনে এসে
দাঁড়ালো বাস স্ট্যান্ডের পাশে একটি দোকানে সিগারেট কিনবে বলে ।
হঠাত আকাশের চোখ পড়লো হলুদ রং এর চুড়িদার পড়া একটি সুন্দরী মেয়ের দিকে
।মেয়েটার চোখের নীচে পড়া কালির দাগটা আকাশের খুব চেনা চেনা মনে হল
।মেয়েটাকে চিনতে একটু ও অসুবিধা হল না আকাশের ।মেয়েটার নাম মেঘলা রায়
।কলেজে তারা দুজনে একসাথে পড়তো ।একসময় খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল আকাশ আর
মেঘলার মধ্যে ।
এমনকি একসময় তাদের প্রেমটা শরীর পর্যন্ত গড়িয়েছিল ।তার সবচেয়ে বড় প্রমান
মেঘলার বুকের বামদিকের স্তনের ওপরের তিলটার কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে
আকাশের ।
আকাশ লক্ষ্য করল মেঘলার করুন জলেভরা চোখ দুটো অজস্র প্রশ্ন  নিয়ে তার
দিকেই তাকিয়ে আছে ।মেঘলা আজ ও বিয়ে করেনি ।"যদি দং হৃদয়ং মম ,তদি দং
হৃদয়ং তব " মন্ত্রটা দুজনা মিলে একদিন একসাথে উচ্চারন করলে ও ,আজ তার
কোনো দাম নেই ।
এইসব কথা মনে পড়তেই আকাশের বুকের ভিতরটা কেমন জানি খচখচ করে উঠল ।আকাশের
আর সিগারেট কেনা হলনা ,সে দ্রুত পায়ে বাড়ির পথে রওনা দিল ।এদিকে বৃষ্টি ও
জোরে শুরু হয়েছে ।আকাশ আর পিছনে ফিরে দেখেনি ,যে বৃষ্টির জল আর মেঘলার
চোখের জল কোথা ও মিলে মিসে এক হয়ে গেছে কি না .....

             -: সমাপ্ত :-
খবর

(গল্পের শুরুতেই জানিয়ে রাখি ,রাজর্ষি গাঙ্গুলী বলে চরিত্রটি সম্পূর্ন
কাল্পনিকচ চরিত্র ।বাস্তবের সাথে কোনোরকম সম্পর্ক নেই ।)

আজ শনিবার ।অফিসের ছুটি ।তাই বিগবাজারে এসেছি কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস
মার্কেটিং করব বলে ।মার্কেটিং সেরে কার পার্কিং জোনে নিজের গাড়িটার লক
খুলে ,কেনাকাটি করা জিনিস গুলো গাড়িতে রাখছি ।হঠাত এমন সময় পিছন থেকে
একটা হাত আমার কাঁধে এসে থামল ।পিছনে ফিরে দেখলাম হাতটা আর কারো নয়
,রাজর্ষি গাঙ্গুলীর ।রাজর্ষি আমার কলেজের সহপাঠী ।কলেজ ছাড়ার পর আর
আমাদের দেখা হয়নি ।দীর্ঘ আট বছর পর আজ আবার দেখা হল আমাদের ।সত্যি কথা
বলতে ওকে দেখে আমি খুব খুশিই হলাম ।আমি ওকে কফি খাওয়ার প্রস্তাব দিলাম ।ও
আপত্তি করল না ।আমি রাজর্ষির সাথে রাস্তার পাশের কফি হাউসে প্রবেশ করলাম
।বেয়ারাকে ডেকে দুজনার জন্য দুটো কোল্ড কফির অর্ডার দিলাম ।তারপর আমরা
শুরু করলাম পুরানো দিনের স্মৃতিচারন ।আমি কলেজ পাস করার পর প্রফেসান
হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জব ।আর রাজর্ষি বেছে
নিয়েছিল সাংবাদিকতার কাজ ।স্থানীয় একটি নামকরা দৈনিক সংবাদ পত্রের একজন
নামী সাংবাদিক রাজর্ষি ।

 বেয়ারা এসে কফি দিয়ে গেল ।কফিতে চুমুক দিয়ে আমি বললাম --"তারপর এখন কী
রকম চলছে তোর ?"রাজর্ষি বলল যে সে এখন ছুটিতে আছে ।অফিসের বসকে ছুটির
কথাটা বলতেই বস রাজি হয়ে গেল ।বসের রাজি হবার অবশ্য একটা কারন আছে
।দিনকয়েক আগে রাজর্ষি ফ্রান্সে গিয়েছিল ।ইউরোকাপের টাটকা খবর সংগ্রহ করবে
বলে ।কাজের সূত্রে রাজর্ষিকে সারা বছর দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতে হয় ।জাপান
,ব্রাজিল ,দুবাই ,ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি জায়গায় তাকে যেতে হয়েছে কাজের
সূত্রে ।সম্প্রতি রাজর্ষি গিয়েছিল ফ্রান্সে ।সেখানে ফুটবলের সাথে আরো
একটা খবর জোগাড় করে রাজর্ষি ।ফ্রান্সে ইউরোকাপ শেষ হবার দিন কয়েক পর যে
ট্রাক দুর্ঘটনাটা ঘটল ,সেটার কিছু টাটকা ছবি তোলে রাজর্ষি ।হ্যাঁ আপনারা
ঠিকই ধরেছেন ,যে ট্রাকটা ৮৪ জনকে একসাথে পিষে মেরেছে ফ্রান্সের রাস্তায়
।আমি এখানে সেই ঘটনার কথাই বলছি ।সেই দুর্ঘটনার যে ছবি রাজর্ষি তুলেছিল
।সে সব ছবি এবং তথ্যর জন্যই নাকি রাজর্ষিদের সংবাদ পত্রের বিক্রির পরিমান
কয়েক গুন বেড়ে গেছে ।আর ঠিক এই কারনেই রাজর্ষির দিন কয়েকের ছুটি মঞ্জুর
করেছে ওর অফিসের বস ।

 আমি রাজর্ষিকে শুভেচ্ছা জানালাম ওর এই কাজের জন্য ।কিন্তু এরপর রাজর্ষি
আমাকে যে কথাটা বলল ,আমি তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ।রাজর্ষি
আমাকে বলল যে ও সামনের সপ্তাহে বাংলাদেশে যাবে ।ওখানে নাকি একটা
রেস্তরাতে জঙ্গিরা আক্রমন করবে ।আমি অবাক হয়ে ওকে বললাম --"তুই জানলি কী
করে ?"রাজর্ষি চুপিচুপি চারদিকটা একবার ভাল করে দেখে নিয়ে ,তার মুখটা
আমার কানের কাছে নিয়ে এসে অত্যন্ত নীচু গলায় আমাকে বলল--"দেখ তুই আমার
অনেক পুরানো এবং বিশ্বস্ত বন্ধু ।তাই কথাটা শুধু তোকে বলছি ।আমরা এমন
কয়েকজন সাংবাদিক আছি ,যাদের নেটওয়ার্ক জঙ্গিদের সাথে যুক্ত আছে ।জঙ্গিরা
কখন কোথায় কী করবে ,তার খবর আমাদের কাছে অনেক আগে থাকতেই থাকে ।"সে আরো
বলল মুম্বাই এ অ্যাটাক ,পাঠানকোটে অ্যাটাক .কিংবা পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কার
ক্রিকেট টিম বাসের ওপর যে জঙ্গিরা অ্যাটাক করবে ,তার খবর আমাদের কাছে
অনেক আগে থাকতেই ছিলো ।আমি ওকে বললাম --"কিন্তু তোরা এই সব খবর অনেক আগে
থেকেই যদি জানতে পারিস ,তাহলে পুলিশ কে জানাস না কেন ? "এমন সময় ওর ফোনটা
বেজে উঠল ।ফোনে কথাটা শেষে করার পর ও আমাকে জানাল ওর বাংলাদেশের পরিবর্তে
পাকিস্তানে যেতে হবে বিশেষ খবর সংগ্রহের জন্য ।যদি ও বিশেষ খবরটার কথা ও
উল্লখ করল না ।ওদের অফিসের বস অর্ডার দিয়েছে ও যেন এক্ষুনি বেড়িয়ে পড়ে
।যাবার আগে অবশ্য রাজর্ষি আমাকে আমার প্রশ্নর উত্তরটা দিয়েগিয়েছিল ।একটা
নির্দয় হাসি হেসে রাজর্ষি আমাকে বলেছিল--"১২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে
কয়েকশো মানুষ যদি মরে যায় ,তাহলে কোনো ক্ষতি নেই ।আর তাছাড়া খবর চাইতো
পাবলিকের জন্য ।রঙচঙে রক্ত মাখানো খবর না হলে ,পাবলিক আবার ঠিকঠাক খেতে
চায় না ।"

 বাড়ি ফেরার পথে আমাকে সেদিন খুব সাবধানে গাড়ি ড্রাইভিং করতে হয়েছিল
।খালি একটাই কথা মাথার ভিতরে বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল ।রাজর্ষিরা কী করে
এতগুলো মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারে !! কয়েকদিন পর বাংলাদেশে
রেস্তরার জঙ্গি আক্রমনের খবরটা কাগজে পড়ে ,খুব খারাপ লাগছিল আমার ।কিন্তু
আমার ও তো কিছু করার ছিল না ।কারন আমার কাছে কোনো প্রমান ছিল না ।

দিন ১৫ পরে হঠাত একদিন দেখলাম কাগজে বেরিয়েছে ভারতীয় সাংবাদিক রাজর্ষি
গাঙ্গুলী পাকিস্তানে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসলামাবাদে একটি জঙ্গির
আত্মঘাতী বিষ্ফোরনে প্রান হারিয়েছেন ।খবরটা দেখলাম রাজর্ষি যে সংবাদ
পত্রে সাংবাদিকতার কাজ করত ,সেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ।খবরটা পড়ে
আমি মনে মনে ভাবলাম রক্ত মাখানো খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আজ নিজেই রক্ত
মাখানো খবর হয়ে গিয়েছে ।কারন সব খবর আগে থাকতে জানা যায় না ।পাকিস্তানের
বিষ্ফোরনের খবরটা হয়তো রাজর্ষিকে তার বস ইচ্ছা করেই তাকে জানায়নি ।কারন
বস হয়তো চেয়েছিল এবারের রক্ত মাখানো খবরের রক্তটার রং যেন আরো বেশী গাঢ়
হয় ।

Sunday, August 7

আগে ও পরে



এইতো সেদিনের কথা, মোখলেসের মনে আনাচে কানাচে উপচে পড়ত সুখ। শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধু একজনের মুখই ভেসে উঠত চোখের সামনে। তার হৃদয় রাজ্যের রানী তার অপ্সরী তার প্রাণেশ্বরী তার মনের মানুষ জরিনা খাতুন। আহা তার রূপের ঝলকে মোখলেস এমনই অন্ধ যে দুনিয়ার আর কোন প্রাচুর্য মোহ তার চোখেই লাগতনা। জরিনা খাতুনও কম যায়নি কোন অংশে। উঠতে বসতে মিস কল মেরে মেরে মোখলেসের কর্ণপোকা নাড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করত। “ওই তুমি রাইতে খাইছ”? ওই তুমি মিস কল দেখবার পাওনা? ফুন দাওনা কেন?” কি ব্যাপার ফুন এতক্ষণ ব্যস্ত কয় কেন কার লগে এত কথা কও? ” ওই হুনো একখান নয়া ফিলিম আইছে আইজ কইলাম দেহান লাগব। মোখলেসও আহ্লাদে গদ গদ হয়ে মুখে স্নো পাউডার মেখে বোগলের তলে কড়া পারফিউম মেরে চোখের সানগ্লাস কপালে তুলে ছুটে যেত জরিনা খাতুনের কাছে। জরিনা ওড়না দিয়ে প্রিয়তমর কপালের ঘাম মুছে দিয়ে বলত “আহারে মুকডা কিরাম হুগনা হুগনা লাগে। ওই তুমি খাওন দাওন করোনা কেন”। আহ কি পিরিত যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে দুজন মানব মানবী এই মাটির ধরায়।

তারা ফিল্ম দেখত, পার্কে ঘুরে ঘুরে বাদাম চিবুতে চিবুতে নতুন জীবনের গল্প করত | কে কাকে কতটা ভালবাসে তা বোঝানোই যেন তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোখলেস গার্মেন্টস এর সামান্য বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী। যা কামাই করে তাতে তার নিজেরই দিন কাটে কোন রকমে। এদিকে জরিনা বিয়ের জন্য বারবার অনুরোধ করছে। মোখলেসও জরিনাকে পাশে চায়। জরিনা অনেক রকম আশ্বাস দিল, বলল মোখলেস কে সে দেবতার মত পূজা করবে, ভালবেসে তাকে পূর্ণ করে দিবে হ্যান ত্যান আরও কত কি। এইবার যে ঘর বাঁধতেই হবে। হার মানল মোখলেস। অবস্থা এমন “ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া, করতে হবে এবার বিয়া”। যাক অবশেষে এল সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত। তারা ভালবেসে নতুন জীবন শুরু করল।

এইতো গেল বিয়ের আগের গল্প। কিন্তু পরের গল্প কি ততোটাই মধুর ছিল? প্রথম কিছুদিন ভালই চলেছে, কিন্তু এরপর থেকেই সব বদলে যেতে থাকে। ঐ যে কথায় বলেনা অভাব যখন দরজায় কড়া নাড়ে ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। শুধু যে অভাবই দায়ী তা ঠিক নয়, আসলে বহু কাঙ্খিত কোন কিছু হঠাৎ পেয়ে গেলে মানুষ সে জিনিস টির প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। জরিনার বেলায়ও তাই হল। কথায় কথায় ঝগড়া, চিৎকার চেচামিচি, জিনিসপত্র ভাংচুর, রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাওয়া বারবার, উঠতে বসতে স্বামীকে খোঁটা দেওয়া এ সবই শুরু হল। বদলে গেল জরিনা। মেজাজ যেন সপ্তম আসমানে। বেচারা মোখলেস তো তখন গৃহকর্তীর অত্যাচারে প্রাণ ত্যাগ করে এই অবস্থা। ভয়ে ভয়ে চুপসে থাকে। ভাবে বিয়ের আগে এই মেয়ে কত শান্ত ছিল আর এখন কেমন হয়ে গেল। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। ভাগ্যের লিখন তাকে যে মেনে নিতেই হবে। নিরবে চোখের জল ফেলে আর কবিতা লিখে দিন যায়।

মনে মনে ভাবে দেখা যাক কতদিন জীবন প্রদীপ টিকে থাকে প্রচণ্ড এই কালবৈশাখীর ঝাপটা এড়িয়ে,,,,,,,,,

নিচের কবিতা খানি মোখলেসের লেখা,  তাও একদিন জরিনা খাতুনের চোখে পড়ায় তাকে ছিড়ে কুচি কুচি করে ফেলা হয়েছিল |


অরুণি মায়া অনু

Saturday, August 6

এখন তোমাকে নিয়ে

নরেশ রায়

এখনো তোমাকে নিয়ে
লেখা হয় নানা কবিতা
তুমি এখনো তেমনি সবুজ
ইনকা থেকে এই শতাব্দী 
দেখে অবাক আমি ভাবছি
তোমাকে নিয়ে উড়ে যাব
অন্য কোন ভিন্ন  গ্রহে। 
চাঁদে বড় ভিড় আজকাল
চরকা নিয়ে চাঁদ বুড়ি
বেজায় নাজেহাল। 
তোমায় গোপনে আপন
করে নেব নেই কোন উপায়
অত্যাধুনিক নজরদারি 
ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়। 
পৃথিবীর এক কোণেই তাই
বসাব বাসর। গ্লোবাল ওয়ার্মিং
বারুদে মাখানো ধর্ম  নানা
দুর্যোগের মাঝে দুর্জয়  সাহসে
ক্যাকটাসে ফোটাব ফুল
তুমি থেকো পাশে
                        না করো না
চির চঞ্চলা নীলাঞ্জনা।

মৃত শ্রাবণে

সৌরভ আহমেদ সাকিব

"মনে রবে কি না রবে আমারে।
সে আমার মনে নাই ,
মনে নাই......"

হয়তো একান্তে চোখের অগ্ন্যুৎপাতে
বিরক্ত বিকেলে সঙ্গীহীন নৌকা বিহার
যখন থেমে যায়;
স্মৃতির ফড়িং উড়তে থাকে অবচেতন আকাশে....

আমি ভুলতে পারিনি এই ধূসর মৃত্তিকার গান
ছড়িয়ে পড়েছে যা তোমার নুপূরের ঢেউ এ।
আমার বেঁচে থাকার সংকল্পের রং
তোমার গ্রীবার মত কোমল।
ভাবনার শান্ত বলয়ে তুমি আমার পালতোলা নৌকা;
মেদুর ভাবনার নক্ষত্র স্পর্শ আমার অনুরাগের
ঠোঁটে মেলে দিয়েছে নীলাভ সমুদ্দুর।

আমি বাঁচতে চেয়েছি ইউলিসিসের চোখে,
অর্ফিয়াসের বীণার অনুরণনের মত ছুঁতে চেয়েছি
শ্রাবণ্যের বুক।
নিশ্চল কবিতার লাইন মুঠো ভরে তুলি নিয়ে
উড়িয়ে দিয়েছি রাতের স্বপ্ন বিলাপে;
যদি তুমি আবার আঁকড়ে নাও আমায়
মৃত নাবিকের প্রেয়সী রূপে তোমার নিঃস্বতার বালুতটে.....

শ্রবণ্যের থেকে দূরে
※※※※※※※※

এখানে মৃত্যুকথা দীর্ঘ।
গাছেদের নীরবতা শব ব্যবচ্ছেদের টেবিলের মত
শান্ত ও শীতল।
অবিশ্বাসের ধুতরো ফল খেয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে
পাগল প্রেমিক।
গায়ে তার মৃত টেলিগ্রাম....

আমার স্তুপীকৃত আহ্বান মেট্রোপলিটন শহরের
সুড়ঙ্গ পথে সহমর্মিতা খোঁজে।
কাল রাতে স্বপ্নে সার্ত্রের গালে সশব্দে চড় কষিয়ে,
সকালে মনে মনে ক্ষমা চেয়েছি।

আমার কৃষ্ণপক্ষের জীবন...
প্রত্ন হরফে লেখা দীর্ঘশ্বাসের গুহা আমার ফুসফুসে।
পুনর্মুদ্রিত কোনো ভালোবাসা বা আসক্তির
ক্রান্তদর্শী ছায়া ঘুম পাড়ায় না আমায়।
আমি শ্রাবণ্যকে হারিয়ে ফেলেছি.....

 

Wednesday, August 3

অক্ষর লিপি

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

বিহা ঘর । সিনায় আইল । আইবুড়া বিটিছিলা  । শাওনে ভাদুর গান আর পরনে কানি

বেলাউজ । ঢাইকতে লাইরছে তন ।
ফিলিম দেইখছে নুনুগুলান আর বইলছে ভাল কেনে

হলুদ পারা ট্যাসকি আর পাঘা বাঁধা সঙ । দমে গনধো মাইখে ভুঁটি বাগায়
কে টোকরি মাথায়

মার তরে কামিন আইনতে আইসেছে । বিটি বিকায় পণের টাকায় । প্যাটের 
বড়ো টান বছরকি দিনে

আঁধার পারা মেঘ । বৃষ্টির দুকানে আয়
মুক্তার পারা আশু দিব এমন সাঁঝের
বেলা আর চিরুণ কইরব চুলে...

2.
অক্ষর লিপি দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

পলক । লক । কথাও । ওরা বুঝতে পারছে না । নাম করতে করতে জমে যাচ্ছে ধ্যান

বিন্দু ঘামের । র কিছু হবার নেশায় । সায় । আশার শেষে আষাঢ় আর বীজতলা

প্রস্তুত । তবুও দ্বিধা । ধাক্কা প্রবল । বলগুলি শরীরের ভাগ্যবান খেলোয়াড়ের হাতে

প্রাণ । ণত্ব বিধান ষত্ব বিধানে নেই । ইতি টানবার আগে চিঠি দেখে অনেক না বলা

অবলা মর্জিনা ছেলে হয়ে ওঠে আব্বু আমিনার ঘরে
৩.
অক্ষর লিপি দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

রাস্তা । তাকে ভিড় দিল । দিলদার দিল না । নাকউঁচু লোকজন নাক সিঁটকে বলে উঠলো গাঁইয়া অসামাজিক

ম্যাজিক ছিল না কথায় । ঠাঁই পেতে বসে । সে কুড়িয়ে নিচ্ছিল যা তার অত্যন্ত নয়  পলিপ্যাক আর কাগজ

গজগামিনী । নীতা নামে মেয়েটি । টি বোর্ডে কাজের পর কোথায় চলে যায়
বিনয় বাদল দীনেশ জানে না

নামছে অন্ধকার । কার পাখি কবে খাঁচা  ভুলে । লেখার খাতায় তার 
পালক রেখে চলে গেছে তারায়

রায় ঘোষণা হওয়ার আগেই সে দেখলো আসলে কেউই  অপরাধী নয়

মনুসংহিতার হত্যাদৃশ্য


দেবজ্যোতিকাজল

গল্পটার কাহিনী যাই হোক না | গল্পটার সারাংশ যাই থাক না | গল্পকারের ফাঁদ মস্তিষ্কের তারিফ না করে পারছি না | গল্পের প্রধান চরিত্র ছিল নর্তকী |

ধাক্কার উপর ধাক্কা | এক হ্যাঁচকাটানে গাছের ফুল সহ ফল দরদর করে পরছিল | প্রতিশোধ | হ্যাঁ প্রতিশোধ নিচ্ছে নারী কলঙ্কের বিজ্ঞাপন দিয়ে | মেয়েটি ভৃত্য | চোখ মুখ অর্ধ মৃত পাখি | ডানাগুলো স্নায়ুহীন নিস্তেজ পালক |

মহামান্য ধর্ষকাপাধ্যায় | নারীর শরীরের গন্ধে পুলিশ কুকুর | আঃ ! কি আত্মতৃপ্ত | ধর্ষকাপাধ্যায় তৃপ্তি রসনায় ঢেকুর তুললেন | নর্তকী অবলীলায় বললেন , ছিঃ ছিঃ তুমি !

ধর্ষকাপাধ্যায় বললেন , হ্যাঁ আমি | নারীর আবার সতীত্ব | এই নে পুরস্কার |

ততক্ষণে নর্তকী মাটিতে বিশ্বাসঘাতকতার যন্ত্রণায় কটকট করছিলেন | রক্ত আর রক্ত | এতক্ষণ যে রক্ত চুক্ষুটা শরীরর শাসন করছিল | তার সতীত্বের রক্তে সিক্ত শয্যা উপভোগ প্রসাধনি | তার পাওনা মেটানো হলো বুকে চাকু মেরে | এক-একটি শ্রী উপপ্যাধায় | ভীষণ মজার পুরস্কার | ময়ূর পালঙ্কে চোখবদ্ধ শারাসি মনুসংহিতা | কী রকম-ফের অভিশাপ নারী জীবনে | অভিশাপ কুড়ায় | নদীর মত নারী | দশভূজার মত নারী | কালীর মত নারী ! মায়ের মত নারী ! বলুন তো ,এসব প্রতীকি শান্তনা ছাড়া আর কী ? মনু যতটা সন্মান দিয়েছেন , তারচে ঢের অবহেলা দিয়েছে সপার্টে থাপ্পরে |